আগস্ট ৩, ২০২২, ০১:২৭ পিএম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চলছে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। প্রতিদিন হাজার হাজার ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অবিভাবকে মুখরিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। আর এ ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে জাবিতে গড়ে উঠেছে রমরমা শিট-বাণিজ্য, খাবারের দাম ও মানের অসঙ্গতি, অনিয়ন্ত্রিত পরিবহণ ব্যবস্থা, অপরিকল্পিত দোকানপাট স্থাপন। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য চরম ভোগান্তির সৃষ্টি করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি, হলুদসহ বাহারী রকমের ফটোকপি করা শীট। ৮-১০ পেইজের শীটের মূল্য রাখা হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। শিক্ষার্থীদের দাবী, এই সমস্ত শীট কোনো কোচিং সেন্টার কিংবা প্রশ্ন ব্যাংক থেকে ফটোকপি করে বিক্রি করা হয়। যার খরচ মূল্য সর্বোচ্চ ১০-১৫টাকা হওয়ার কথা।সেখানে শিক্ষার্থীদের আবেগকে পুঁজি করে তাদের সাথে এক ধরনের প্রতারণা করা হচ্ছে। যশোর থেকে আগত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী শুভ জানান, ক্যাম্পাসে পা রাখতেই দেখি 'কিনলেই চান্স, না কিনলে মিস' এসব নানা হাক-ডাক। অনেকের মতো আমিও এসব শুনে আমিও কিনেছি। কিন্তু চোখ বুলানোর পর বুঝতে পারলাম কোয়ালিটি সম্পন্ন না বরং ভুলে ভরা। যা রীতিমতো আমাকে বিভ্রান্ত করেছে।
শুভর মতো এমন আরেকজন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী নিলয়। বরিশাল থেকে আসা এ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী জানান ডেইরি গেট সংলগ্ন হোটেল গুলোতে খাবারের দাম অতিরিক্ত রাখা হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডেইরি গেট সংলগ্ন খাবারের দোকাগুলোতে নেই কোনও মূল্যতালিকা। ১ প্লেট ভাতের দাম ২০ টাকা,মুরগীর মাংস ১০০ টাকা, ১ প্লেট খিচুড়ি ৪০ টাকা,ডিম ভাজা ৩০ টাকা, চিংড়ি মাছ ঝোল ১৬০ টাকা। যেখানে ১ দিন আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ও ডেইরি গেটের দোকানগুলোতে ভাতের দাম ছিল ১০ টাকা, খিচুড়ি ২৫ টাকা,ডিম ভাজা ১৫ টাকা, মুরগী ৪০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৬৫ টাকা। শুধু ডেইরি গেট সংলগ্ন দোকান নয়, বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরে অস্থায়ী খাবারের দোকানগুলোর বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছে অনেকে। ইচ্ছেমত খাবারের দাম রাখা, বাসি খাবার বিক্রি, ক্রেতাদের সাথে খারাপ আচরণসহ নানা অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে গড়ে উঠা প্রতিটি দোকানে মূল্যতালিকা রাখার নির্দেশনা থাকলেও তা মানছেনা কেউ। প্রতি প্লেট তেহেরীর দাম রাখছে ১৫০ টাকা, এক পিচ ব্রয়লার মুরগী ৮০ টাকা, বিরিয়ানী ১৮০ টাকা। যা স্বাভাবিক দামের চেয়ে অনেক বেশি। পানির দাম লিটার প্রতি পাঁচ থেকে দশ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে।
সি ইউনিটে পরীক্ষা দিতে আসা কানিজ ফাতিমা বলেন, “আমি এক প্লেট খিচুড়ি আর এক পিস মুরগীর মাংস খেয়েছি। আমার কাছ থেকে ১২০ টাকা দাম নিয়েছে। খাবরের এরকম দাম নিতান্তই ডাকাতি করে নেওয়ার মতো”।
ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো.তাফাজ্জ্বল হোসেন জানান, ‘দোকানে মূল্যতালিকা ছিলো কিন্তু হিসেব করে দেখলাম তারা আমার থেকে সে অনুযায়ী দাম রাখেনি। তাদের কে জিজ্ঞেস করলেও তারা বলে এ সময় সব কিছু্রই দাম বেশি।’
এছাড়াও ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসজুড়ে বেড়েছে রিকশা ভাড়ার দাম। ক্যাম্পাসে সর্বোচ্চ ভাড়া ২০ টাকা হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুণ থেকে চার গুণ নিচ্ছেন চালকেরা।
ভর্তিচ্ছু একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ক্যাম্পাসে এ অল্প দূরত্বে ভাড়া অনেক বেশি রাখা হচ্ছে। আমরা ক্যাম্পাস ভালোভাবে চিনি না বলে রিকশাওয়ালা আমাদের থেকে বাড়তি ভাড়া নিয়ে যাচ্ছেন। এতোটুকু দূরত্বের রাস্তায় এতো ভাড়া সত্যি অস্বস্তিকর।
ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষ্যে খাবারের দোকান ছাড়াও কাপড়, বিছানার চাদর, জুতা, মনিহারী পণ্য সহ বিভিন্ন রকমের অবৈধ দোকানপাট গড়ে উঠেছে। অবৈধভাবে গড়ে উঠা দোকানের কারনে সৃষ্ট হচ্ছে বিশৃঙ্খলা এবং যানজট। যার কারনে পরীক্ষা দিতে আসা ভর্তি পরীক্ষার্থীদের পরতে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিলো দোকানপাট গুলো হবে রাস্তা থেকে ২০ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে। কিন্তু দেখা গেলো মনিহারী পণ্যের ১০ থেকে ১২ টা দোকান গড়ে উঠেছে রাস্তা দখল করেই। যার কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেট থেকে আসা রাস্তায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সহকারী রেজিস্টার আব্দুর রহমান বাবুল বলেন, অস্থায়ী দোকান উচ্ছেদের ব্যাপারে আমরা দু দিন তদারকি করেছি। তাদেরকে সতর্ক করে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
খাবারের দাম বেশি রাখা নিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা কোন অভিযোগ পাইনি। আপনার মাধ্যমেই শুনলাম। মূল্য তালিকা প্রতিটি দোকানিকে দেওয়া হয়েছে। তালিকায় যে পরিমাণ মূল্য দেওয়া সেই পরিমাণ মূল্য রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও যদি কেউ অমান্য করে নিজের খেয়াল খুশিমতো দাম রাখে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) আ. স. ম ফিরোজ-উল হাসান বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন প্রশাসনের প্রধান কাজ ও লক্ষ্য থাকে সার্বিক পরিবেশ স্বাভাবিকভাবে বজায় রেখে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যান্তরে খাবরের দোকান স্থাপনের অনুমোদন,খাবারের মূল্য নির্ধারণ তদারকি সহ আনুষাঙ্গিক বিষয় সংশ্লিষ্ট কাজ ন্যস্ত থাকে স্টেট অফিসের উপর। প্রশাসন নির্দেশনার কোনরুপ ব্যাতিক্রম হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এসব বিষয়ে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও উনাকে পাওয়া যায়নি।