ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস কোনও জটিল অসুখ নয়৷ কিন্তু ঘুরে–ফিরে আসে বলে নাজেহাল করে বিস্তর৷ কোথায়, কখন পেট গুড় গুড় করবে বা পেটব্যথা-গ্যাস হবে, কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেটখারাপ হবে, তা কেউ জানে না৷ আবার কখন হঠাৎ সব ঠিক হয়ে যাবে, তা-ও বোঝা মুশকিল৷ ওষুধপত্রে রোগ বশে থাকলেও পুরোপুরি সারে না৷
তবে সুবিধে হল, এ রোগ বিপজ্জনক নয়, সাবধানে চললে সমস্যা কম থাকে৷ কাজেই অহেতুক দুশ্চিন্তা না করে চিকিৎসা ও নিয়ম মানার পাশাপাশি ‘লো-ফডম্যাপ’ খাবার খাওয়া শুরু করুন, ভাল থাকতে পারবেন৷ এই ধরনের খাবার খেলে প্রায় ৭০ শতাংশ রোগী ভাল থাকেন বলে জানা গিয়েছে৷
যে সব খাবারে ওলিগোস্যাকারাইড, ডাইস্যাকারাইড ও পলিওল নামের কার্বোহাইড্রেট কম আছে, সেটাই হল ‘লো–ফডম্যাপ’ খাবার৷ কয়েকটি উদাহরণ দেখে নেওয়া যাক৷
লো–ফডম্যাপ খাবার
১। প্রোটিন: চিকেন, ডিম, মাছ, চিংড়ি, টোফু, বিফ, ল্যাম্ব, পর্ক
২। গোটাদানা শস্য: ব্রাউন রাইস, শ্যামাদানা, ওট্স, কিনোয়া
৩। ফল: কলা, ব্লুবেরি, কিউয়ি, লেবু, কমলা, পেঁপে, আনারস, স্ট্রবেরি
৪। সব্জি: পালং, গাজর, বেল পেপার, বেগুন, টমেটো, বিন স্প্রাউট
৫। বাদাম ও বীজ: অ্যামন্ড, চিনে বাদাম, আখরোট, কুমড়ো–তিল–সূর্যমুখীর বীজ
৬। দুগ্ধজাত খাবার: শেডার চিজ, ল্যাকটোজ ফ্রি দুধ, পারমেশন চিজ
৭। তেল: অলিভ অয়েল, নারকোল তেল
৮। পানীয়: ব্ল্যাক বা গ্রীন টি, কফি, জল
৯। অন্যান্য: লঙ্কা, আদা, সর্ষে, গোলমরিচ, তুলসী, রাইস ভিনিগার৷
কাজেই এই ধরনের খাবার বেশি খেতে হবে৷ কম খেতে হবে ‘হাই ফডম্যাপ’ খাবার, তথা গম, রাই, পেঁয়াজ, রসুন, দুধ, ইয়োগার্ট, নরম চিজ, বিভিন্ন ফল, বিশেষ করে ডুমুর, আম, লিচু, কালোজাম, মিষ্টি খাবার যেমন মধু, লো–ক্যালোরি সুইটনার৷ কারণ দেখা গিয়েছে, এই সব খাবারের মধ্যে কারও একটিতে সমস্যা হয়, কারও হয় একাধিকে৷ তবে কম করে খেলে সচরাচর বিপদ হয় না৷
তবে হঠাৎ করে খাবারে পরিবর্তন না করে এগতে হবে ধাপে ধাপে৷
লো–ফডম্যাপ ডায়েট করুন ধাপে ধাপে
ডায়েটের তিনটি ধাপ৷ প্রথম ধাপে ৩–৮ সপ্তাহ স্রেফ লো-ফডম্যাপ খাবার খেয়ে যেতে হয়৷ বাদ যায় সব রকম হাই–ফডম্যাপ খাবার৷ তাতে প্রথম সপ্তাহেই সুফল পান অনেকে৷ কারও ২–৩ সপ্তাহ বা আরও বেশি সময় লাগে৷
দ্বিতীয় ধাপে, কষ্ট কমার পর একটা করে খাবার তিন দিন অন্তর অল্প করে যোগ করা হয়৷ এবং লক্ষ করতে হয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোনও কষ্ট হচ্ছে কি না৷ না হলে খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হয়৷ তিন দিন সমস্যা না হলে একই নিয়মে নতুন আরও একটি খাবার অল্প করে যোগ করা হয়৷ এ ভাবে এগলে কোন খাবার আপনি খেতে পারবেন তা যেমন বোঝা যায়, কী পরিমাণে খেলে সমস্যা হবে না, তা-ও ধরা পড়ে৷
তৃতীয় ধাপে, কোন খাবার খেলে সমস্যা হয় না, তা বুঝে যাওয়ার পর কখন কোনটা খাবেন, কী বাজার করবেন, হোটেলে খেতে গেলে কী করবেন সব বুঝে সে ভাবে চলতে হয়৷
প্যাকেটের খাবার কেনার আগে তাতে যা উপাদান আছে তার ফডম্যাপের হিসেবও করতে হয়৷ তবে সব হাই–ফডম্যাপ খাবারেই যে আপনার অসুবিধে হবে এমন কিন্তু নয়।
সূত্র: আনন্দবাজার