পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে ৩৫ হাজার টাকা করেছে সরকার।
সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ বিভাগ বলেছে, আসছে নতুন বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ট্রেইনি চিকিৎসকরা মাসে ৩০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। আর আগামী বছরের জুলাই মাস থেকে তাদের ভাতা হবে ৩৫ হাজার টাকা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম।
ভাতা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা চিকিৎসকরা ওই প্রজ্ঞাপন মেনে নিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছেন, যদিও তাদের দাবি ছিল মাসে ৫০ হাজার টাকা।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, “স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের বেসরকারি অবৈতনিক রেসিডেন্ট/নন- রেসিডেন্ট প্রশিক্ষণার্থীদের মাসিক পারিতোষিক ভাতার হার ২৫ হাজার টাকা থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৩০ হাজার টাকায় নির্ধারণ করা হলো- যা চলতি বছরের ২৩ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
“আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে (তাদের ভাতা) ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হল, যা কার্যকর হবে আগামী ২০২৫ সালের ১ জুলাই তারিখ থেকে।”
প্রজ্ঞাপন পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিলন মিলনায়তনে বৈঠকে বসেন আন্দোলনকারী ট্রেইনি চিকিৎসকরা। সেখানেই ভাতার হার মেনে নিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত আসে।
আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটির সভাপতি ডা. জাবির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়’ তারা সরকারের দেওয়া ভাতা মেনে নিয়েছেন। মঙ্গলবার থেকে কাজে ফিরবেন।
“আমরা কাল সকাল ৮টা থেকে কাজে যোগ দেব। তবে জুলাই থেকে ৩৫ হাজার টাকা না দেওয়া হলে এবং দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমাদের ইনক্রিমেন্টের যে দাবি ছিল, সেটা নিয়ে সুন্দরভাবে আগানো না হলে আমরা আবারও রাস্তায় নামতে বাধ্য হব। আমরা চাই না প্রতিবারই আমাদের রাস্তায় নামানো হোক।”
সারাদেশে প্রায় ১০ হাজার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসক রয়েছেন। দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে উচ্চতর শিক্ষার পাশাপাশি তারা হাসপাতালে রোগীদের সেবা দেন।
মাসিক ভাতা ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার দাবিতে ২০২২ সাল থেকে তারা আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।
তাদের আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে জুলাই মাসে মাসিক ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়। ওই ভাতা ‘যৌক্তিক নয়’ দাবি করে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন আন্দোলনকারীরা।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবারও ভাতা বাড়ানোর দাবিতে চিকিৎসকরা আন্দোলন শুরু করেন। এরপর গত ২৩ ডিসেম্বর ভাতা আরো পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
ওই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডাক্তারদের সঙ্গে ওয়াদা বরখেলাপ করা নতুন কিছু না। কিন্তু এই নতুন বাংলাদেশে আর কোনো বৈষম্য মেনে নেওয়া হবে না।”
রবিবার তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করলে সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। দুপুরের পর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমানের সঙ্গে তার বাসায় আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের বৈঠক হয়।
ওই বৈঠকে জানুয়ারি মাস থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং জুলাই মাস থেকে ৩৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় সরকারের তরফ থেকে।
শাহবাগের আন্দোলনকারীরা তা না মেনে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও রাতে সরকারের প্রস্তাব মেনে নেওয়ার ঘোষণা আসে।