করোনা মহামারীতে সংক্রমণের আতঙ্ক, চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা, মৃত্যুভয়, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, বেকারত্বের কারণে মানসিক সমস্যা বেড়েছে। এসময় লকডাউনে আত্মহত্যা ৪৪ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে কমেছে মানসিক রোগের চিকিৎসা নেয়ার প্রবণতাও। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, আইসিডিডিআরবি ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
আত্মহত্যা বেড়েছে ৪৪ শতাংশ
করোনার এক বছরে সারা দেশে আত্মহত্যা করেছে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন নারী-পুরুষ।২০১৯ এর চেয়ে ২০২০ সালে করোনাকালে আত্মহত্যার পরিমাণ বেড়েছে ৪৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি। তবে কারণ বিশ্লেষণে দেখা যায এর মধ্যে ৩২ শতাংশেরই কোনও কারণ জানা যায়নি। আঁচল ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে আসে।
আত্মহত্যা বেশি নারীদের
সারা দেশে করোনাকালে পুরুষের চেয়ে বেশি নারী আত্মহত্যা করেছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। নারীদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যাটা ৫৭ শতাংশ এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ৪৩ শতাংশ। মোট আত্মহত্যার ঘটনা ১৪ হাজার ৪৩৬টি। এর মধ্যে নারীর আত্মহত্যার ঘটনা ৮ হাজার ২২৮টি।
স্বাস্থ্যকর্মীরাও মানসিক চাপে
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জরিপের ফলাফল তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মানসিক রোগের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে ছয় দশমিক সাত শতাংশের মধ্যে বিষন্নতা এবং চার দশমিক সাত শতাংশ মানুষে ভুগেছেন দুঃশ্চিন্তায়। আইইডিসিআর বলছে, কোভিড মহামারীর সময় বাংলাদেশে পরিচালিত কয়েকটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৪৬ শতাংশের মধ্যে বিষন্নতা, ৩৩ শতাংশের মধ্যে দুঃশ্চিন্তার লক্ষণ পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীরা চাপ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।বেগম রোকেয়া বিশ্ব বিদ্যালয়ের এক অনলাইন গবেষণায় দেখা গেছে, এ সময়ে ৭১ শতাংশ মানুষের মধ্যে ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
শিশুরা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. জহির উদ্দিন দ্য রিপোর্টকে বলেন, লকডাউনে শিশুরা ভয়ানকভাবে অসামাজিক হয়ে গেছে। কারো সাথে কথা বলতে চায়না, খারাপ ব্যবহার করে। তাদের মানসিক অবস্থা একদম ভাল নেই। সারাদিন এক টিভি নাহলে মোবাইলের ওপ্র নির্ভরশীল। এতে করে তাদের মানসিক ভারসাম্য ব্যহত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এই মুহুর্তে লকডাউনের কারণে আমাদের রোগীর সংখ্যা কম। তবে, সাধারণত আমাদের রোগীদের চাপ অনেক বেশি থাকে। কোভিডের কারণে মানুষের মাঝে মানসিক বিষন্নতা ও ভয় বেড়ে গেছে। আমাদের এখানে মানুষ বিষন্নতা, একাকীত্ব, একবার কোভিডে আক্রান্ত হলে আবার আক্রান্ত হওয়ার মৃত্যুভয়, শুচিবায়ু বা অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসওর্ডার নিয়ে আমাদের কাছে বেশি এসেছে।
শিক্ষার্থীদের বিষন্নতা
শিক্ষার্থীদের উপড় করা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ বেড়েছে। ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ মানুষের উদ্বিগ্নতা বেড়েছে; ৪৭ ভাগের মধ্যে বিষণ্নতার লক্ষণ দেখা দিয়েছে আর ৭০ ভাগ মানুষের মধ্যে সমসাময়িক পরিস্থিতি বিষয়ে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর ওপর পরিচালিত এ জরিপে দেখা গেছে, করোনা পরিস্থিতির আগের চেয়ে পরে মানসিক সমস্যা চার থেকে পাঁচ গুণ বেড়েছে।