ইউক্রেন ইস্যুতে চলমান অস্থিরতার মধ্যে ১০ দিনের সামরিক মহড়া শুরু করেছে রাশিয়া ও বেলারুশ। পশ্চিমা ও ইউরোপের ৩০টি দেশের সংগঠন ন্যাটো জানিয়েছে, যৌথ এ সামরিক মহড়াটি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে পশ্চিমাদের মধ্যে কয়েক দশক ধরে চলা শীতল যুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সামরিক অনুশীলন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ইউক্রেন জানিয়েছে, এ মহড়া নতুন করে মনস্তাত্বিক চাপ দিচ্ছে কিয়েভকে।
বেলারুশে চলা এ মহড়ায় অংশ নিচ্ছেন প্রায় ৩০ হাজার রুশ সেনা। এ ধরণের মহড়ায় মূলত যুদ্ধের রণকৌশল, বিভিন্ন সমরাস্ত্র সম্পর্কে ধারণা, অধিনায়কের নির্দেশে যুদ্ধ করা, এমন নানা কৌশল দেখানো হয়। মহড়া শেষে রাশিয়ায় ফিরে আসবেন রুশ সেনারা। হোয়াইট হাউজ এ সামরিক মহড়াকে ইউক্রেনের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে। পশ্চিমারা মনে করছে, যেকোন সময়ই ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। ইউক্রেন সীমান্তের কাছে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েনের পরও রাশিয়া বলে আসছে দেশটিতে হামলার কোন পরিকল্পনা নেই তাদের। তবে ইঙ্গিত দিয়েছে ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করা হলে হামলা চালানো হবে। রাশিয়া বলছে, সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় ঘনিষ্ঠ মিত্র ইউক্রেন এখন মার্কিন আধিপত্য থাকা ন্যাটোতে যোগ দেবে এটা মেনে নিতে পারছে না মস্কো।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় ক্রিমিয়া ভুখন্ডকে দেশটি থেকে আলাদা করে নিজেদের দখলে নেয় রাশিয়া। দক্ষিণ ইউক্রেনের পর উত্তর ইউক্রেনের উপরও কিয়েভের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হতে শুরু করে এরপরই। যেখানে রুশপন্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ১৪ হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
বেলারুশের সঙ্গে সীমান্ত সংযোগ রয়েছে ইউক্রেনের। বেলারুশের নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেংকো রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায় যৌথ এ মহড়াকে গুরুত্বের সঙ্গেই নিচ্ছে পশ্চিমারা। ২০২০ সালে বেলারুশের জাতীয় নির্বাচনের ফল নিয়ে পশ্চিমাদের বিরোধিতা ও নানা ধরণের অবরোধ আরোপের পরও রাশিয়া সমর্থন দিয়েছিলো বেলারুশকে। ক্রেমলিনের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সম্প্রতি রাশিয়া ও বেলারুশ নানা ধরণের হুমকির মুখে এ সামরিক মহড়ার আয়োজন করতে যাচ্ছে। ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট এ্যামুনেল ম্যাকরন বলেছেন, সংকট নিরসনে নরম্যান্ডি কার্টার নামে পরিচিত আলোচনায় রাশিয়া, ইউক্রেন,ফ্রান্স এবং জার্মানির নেতারা অংশ নেবেন।
মস্কো সফরে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে ম্যাকরন জানায়, ইউক্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে না জড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাশিয়া। যদিও পুতিন বলেছেন, তিনি এমন কোন নিশ্চয়তা ম্যাকরনকে দেননি। সংকট নিরসনে ২০১৪-১৫ সালে ইউক্রেন, জার্মানি,ফ্রান্স ও রাশিয়ার স্বাক্ষরিত মিনস্ক চুক্তি বাস্তবায়নের উপর গুরুত্ব দিয়েছে ফ্রান্স। ওই চুক্তিতে উত্তর ইউক্রেনে রুশপন্থীদের ধামাতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা আছে। শান্তিপ্রিয় ইউরোপে চলমান এ অস্থিরতা প্রশমনে বাল্টিক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ন্যাটোর সদস্যভুক্ত ল্যাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও এসতোনিয়ার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন ম্যাকরন। এর আগে ম্যাকরন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন এর সঙ্গে একই ইস্যুতে বৈঠক করেছেন। ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করতে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস গেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বেলজিয়ামে ন্যাটোর সেক্রেটারী জেনারেল জেনস স্টোলেনটেনবার্গের সঙ্গে বৈঠক শেষে জনসন জানিয়েছেন, চলমান উত্তেজনা ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে ইউরোপকে।