মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর আধিপত্য মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের হাতে আরো ক্ষমতা দিয়ে নতুন একটি বৈদেশিক নীতিবিষয়ক আইন পাশ করেছে চীন। নতুন এই আইনের ফলে বিশ্ব জুড়ে চীনের স্বার্থবিরোধী কোনো রকম কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। গত ২৮ জুন নতুন এই আইনটি পাশ হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে বিভিন্ন দেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই আইন প্রয়োগ করতে পারবে বেইজিং।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অনেক সমীকরণ বদলে দিয়েছে। মস্কোর ওপর ওয়াশিংটনের সিরিজ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা বিশ্ব বাণিজ্যেও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তবে রাশিয়ার সাথে বাণিজ্যক্ষেত্রে ডলার ব্যবহার না করায় চীনের অনেকটা সুবিধা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ডলারের বিকল্প হিসাবে অনেক দেশই ব্যবহার করছে চীনা মুদ্রা ইউয়ান।
তারপরও রাশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ভালভাবে মেনে নেয়নি চীন। এতে তাদের বিভিন্ন সংস্থার কার্যকলাপও ওইসব দেশে থমকে গেছে বা বাধা পাচ্ছে। এই সমস্যার স্থায়ী ও টেকসই সমাধান খুঁজতে নতুন এই আইন পাশ করেছে শি জিনপিং প্রশাসন।
নতুন আইনটি দেশটির পুরনো আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আইনের সাথে নতুন কয়েকটি নিয়মের সংমিশ্রণ। নতুন এই আইনের মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য ‘বৈরি সম্পর্কের’ দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিতে শুরু করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট।
কী আছে নতুন আইনে?
নতুন আইনটিকে তাদের জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত করার একটি আইনি অস্ত্র হিসাবে ব্যাখ্যা করছে বেইজিং। এর মাধ্যমে যে কোনও দেশের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে কড়া অর্থনৈতিক পদক্ষেপ করতে পারবেন জিনপিং প্রশাসন।
নতুন এই আইনে বলা হয়েছে, কোনো সংস্থা চীনের স্বার্থহানিকর কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে সাজার মুখে পড়বে। এই আইনটি চীনের আগ্রাসী কূটনীতিকে সামনে নিয়ে এসেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তারা বলছেন, আইনটি ১ জুলাই থেকে কার্যকর হলেও কতটা সক্রিয়ভাবে এ আইন প্রয়োগ হচ্ছে তা এখন দেখার বিষয়।
বিশ্লেষকদের মতে, কোভিড মহামারি-পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে উন্মুখ হয়ে আছে চীন। এমন সময়ে এরকম একটি আইন করে শি জিন পিংয়ের হাত আরো শক্তিশালী করা হলো।
এবিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আইনের অধ্যাপক জ্যাক ডিলাইসলে বলেন, “এ আইন তুলনামূলকভাবে ফাঁকা বুলিসর্বস্ব এবং অনেকটাই সুপরিচিত। তবে আইনটি কড়া বৈদেশিক নীতির বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ধাক্কা।”
চীনের গণমাধ্যম দ্য গ্লোবাল টাইমস এর প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিমা আধিপত্যবিরোধী গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার এ আইন।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, বেইজিংয়ের সক্রিয়ভাবে নিজেদের স্বার্থের দিকে ধাবিত হওয়ার অভিপ্রায়ের একটি লক্ষণ।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু কোম্পানির স্থানীয় কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে চীন। চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও প্রযুক্তিগত নিষেধাজ্ঞা বাড়তে থাকার পালটা পদক্ষেপ হিসেবেই বেইজিং এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
নতুন আইনে বলা হয়েছে, যে কোনও দেশের উপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা যদি কোনও ভাবে চিনের স্বার্থে আঘাত করে, তবে সেই অধিকার সুরক্ষিত করতে পারবে বেইজিং।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পাল্টা হিসাবে বিভিন্ন মার্কিন সংস্থার বিরুদ্ধে চীনও ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছিল। তবে ডলারের মাধ্যমে যেহেতু আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চলে তাই চীনের ওই ব্যবস্থা ফলপ্রসু হয়নি।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ওই ব্যর্থতার পর এবার ভিন্ন পথে হাঁটলেন শি জিনপিং। নতুন এই আইনের মাধ্যমে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার পথ চীনের জন্য আরও সুগম হলো। সূত্র: আনন্দবাজার ও দ্য গ্লোবাল টাইমস।