নভেম্বর ২৫, ২০২৪, ০১:৫৮ পিএম
ঘরে কিংবা বাইরে –সর্বত্রই নারীরা নির্যাতনের শিকার। নারীরা যেন কোথাও নিরাপদ নয়। এমনকি নিজের বাড়িও নারী ও কিশোরীদের জন্য বিপজ্জনক স্থান হয়ে উঠেছে।
২৫ নভেম্বর, আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন বিরোধী দিবসে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
জাতিসংঘের দুটি সংস্থা –ইউএস উইমেন এবং জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ দপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ২০২৩ সালে বাসা-বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে, বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন গড়ে ১৪০ জন নারী ও কিশোরী তার নিকটাত্মীয় বা পরিবারের সদস্যের হাতে হত্যার শিকার হয়েছেন।
মোট সংখ্যার হিসাবে, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫১ হাজার ১০০ নারী ও কিশোরীকে তাদের সঙ্গী বা পরিবারের সদস্যরা হত্যা করেছে। এর আগের বছর, ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৮ হাজার ৮০০ জন।
হত্যা বাড়ার কারণে এক বছরের ব্যবধানে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে এমন নয়, বরং তথ্যপ্রাপ্তির উন্নতির কারণে মোট সংখ্যা বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী এই সহিংসতা চলছে। অঞ্চলের ভিত্তিতে আফ্রিকায় এই সহিংসতার হার বেশি। সঙ্গী ও পরিবারের সদসস্যদের হাতে আনুমানিক ২১ হাজার ৭০০ জন হত্যার শিকার হয়েছে ২০২৩ সালে। জনসংখ্যার তুলনায় এই ধরনের মৃত্যুর হারও সবচেয়ে বেশি ছিল এই মহাদেশে। প্রতি ১ লাখে ২ দশমিক ৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে এই অঞ্চলে।
আমেরিকা এবং ওশেনিয়া মহাদেশেও এ সংক্রান্ত মৃত্যুহারের ঘটনা ছিল বেশি। আমেরিকায় প্রতি ১ লাখে ১ দশমিক ৬ জন নারী এবং ওশেনিয়ায় প্রতি ১ লাখে ১ দশমিক ৫ জনকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
বিপরীতে এশিয়া ও ইউরোপে মৃত্যুহার ছিল অনেক কম। এশিয়ায় প্রতি এক লাখে শূন্য দশমিক ৮ এবং ইউরোপে শূন্য দশমিক ৬ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, লিঙ্গের ভিত্তিতে ঘরে ও বাইরে সংখ্যার বিচারে পুরুষ ও কিশোরেরাই হত্যার শিকার হয়েছে বেশি। তবে বাড়ির ভেতরে প্রাণঘাতী সহিংসতার বেশি শিকার হয়েছে নারীরা।
ইউরোপ ও আমেরিকায় বেশিরভাগ নারী তার সঙ্গী দ্বারা হত্যার শিকার হয়েছে বাসা-বাড়ির ভেতরে। অন্যদিকে পুরুষ অথবা কিশোরদের হত্যা করা হয়েছে বাড়ির বাইরে কোথাও।
২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী ঘরে-বাইরে মোট হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া মানুষের মধ্যে নারী হত্যার হার ছিল ২০ শতাংশ। যার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ নারী ও কিশোরীই ঘরের অভ্যন্তরে ঘনিষ্ঠ সঙ্গী বা পরিবারের সদস্যের হাতে হত্যার শিকার হন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই ধরনের হত্যাকাণ্ডগুলো উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
এসব মৃত্যু প্রায়ই লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ফলে ঘটে এবং সঠিক সময়ে ও কার্যকর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব।
প্রতি বছর ২৫ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনটি নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার জন্য পালিত হয়। ১৯৮১ সালে প্রথমবার এই দিনটি পালন শুরু হয় যা পরে ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়।