গাজা যুদ্ধ শুরুর পর আন্তঃসীমান্ত সংঘাতের সবচেয়ে প্রাণনাশকারী ঘটনার অংশ হিসেবে লেবাননে সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর অবস্থানগুলোতে সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এসব হামলায় ৩৫ শিশুসহ ৪৯২ জন নিহত হওয়ার সংবাদ দিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। খবর এএফপির।
আরব দেশগুলো হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের বাড়তে থাকা এই শত্রুতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, গত এক বছরে এই শত্রুতার মাত্রা আরও তীব্র হয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও অন্যান্য মিলিশিয়া গ্রুপের হামলার মাধ্যমে গাজায় যে যুদ্ধ শুরু হয়, তাতে হিজবুল্লাহসহ অন্যান্য ইরানপন্থি সশস্ত্র সংগঠনগুলো একে একে জড়িয়ে পড়ে।
ইসরায়েল বলেছে, লেবাননের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে সোমবারের হামলায় তারা হিজুল্লাহর এক হাজার ৬০০টি অবস্থানে আঘাত হেনেছে। এসব হামলায় একটি বড় সংখ্যার হিজবুল্লাহ মিলিশিয়া নিহত হয়েছে বলেও দাবি করেছে তারা। ‘অপারেশন নর্দার্ন অ্যারোস’ নামের এই অভিযানে সুনির্দষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
এদিকে হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তাদের তৃতীয় শীর্ষ নেতা আলি কারা তাকে লক্ষ্য করে চালানো হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছেন এবং এখন নিরাপদে আছেন। লেবাননের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম পূর্ব লেবাননে আরও হামলার খবর দিয়েছে। হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের পাঁচটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ৩৫ শিশু ও ৫৮ জন নারীসহ ৪৯২ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরও এক হাজার ৬৪৫ জন। এ বিষয়ে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রী ফিরাস আবিয়াদ জানান, হামলায় কয়েক হাজার মানুষ তাদের বসবাসের স্থান থেকে অন্য এলাকায় সরে গেছে।
হামলার সময় লেবাননের পূর্বাঞ্চলীয় প্রাচীন শহর বালবেকের আশপাশের এলাকার আকাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। দক্ষিণাঞ্চলীয় জাওতার গ্রামের ৬০ বছর বয়সী ওয়াফা ইসমাইল নামের এক গৃহকধূ হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, “আমরা বোমাবর্ষণের মধ্যেই ঘুমাই আবার জেগে উঠি, এমনভাবেই চলছে আমাদের জীবন।”
এদিকে বিশ্বের শক্তিধর ও প্রভাবশালী দেশগুলো ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর প্রতি সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, এই সংঘাত এখন গাজার সঙ্গে ইসরায়েলের দক্ষিণ সীমান্ত হতে উত্তরে থাকা লেবাননের সীমান্তে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফ্রান্স ও মিসর এ বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে। ওদিকে ইরাক নিউইয়র্কে চলতে থাকা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে আরব দেশগুলোকে জরুরি বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়েছে।