এপ্রিল ১১, ২০২৫, ১২:১৮ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
বিভিন্ন বয়সী মার্কিন নাগরিকদের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ ইসরায়েল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা রাখেন বলে একটি গবেষণা সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিউ (পিইডব্লিউ) রিসার্চ সেন্টার এ জরিপ পরিচালনা করে। মঙ্গলবার এই জরিপের ফল প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি।
শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ইসরায়েলি গণমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নির্বিচার হামলা শুরুর পর দেশটির বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাব পোষণকারী মানুষের সংখ্যা সারা বিশ্বেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও এর ব্যতিক্রম নয়।
পাশাপাশি বেশিরভাগ আমেরিকান মনে করেন গাজার বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ইচ্ছা বা সক্ষমতা নেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর।
জরিপের ফলের সারসংক্ষেপ
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিউ (পিইডব্লিউ) রিসার্চ সেন্টারের জরিপে জানা গেছে, ৫৩ শতাংশ আমেরিকান সার্বিকভাবে ইসরায়েল সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। ২০২২ সালে এই হার ছিল ৪২ শতাংশ।
২৪ মার্চ থেকে ৩০ মার্চের মধ্যে তিন হাজার ৬০৫ আমেরিকান প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এই জরিপে অংশ নেন।
ফেব্রুয়ারিতে গ্যালাপের এক জরিপেও ইসরায়েলের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রাখা মার্কিন নাগরিকের সংখ্যা কমার আভাস পাওয়া গিয়েছিল।
‘গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার’ পরিকল্পনায় সায় নেই মার্কিনিদের
পিউ আরও জানতে পেরেছে, বেশিরভাগ আমেরিকান চান না যুক্তরাষ্ট্র আবাসন প্রকল্প চালুর জন্য গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিক।
জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন।
৬২ শতাংশ আমেরিকান ট্রাম্পের এই নীতির বিরুদ্ধাচরণ করেছেন।
মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ এই পরিকল্পনায় সায় দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্টের নিজ দলের সমর্থকদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ এর বিরোধিতা করেছেন আর এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ২৭ শতাংশ।
তবে ৪৬ শতাংশ মার্কিনী মনে করেন ট্রাম্প এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পেছনে লেগে থাকবেন।
ট্রাম্প বারবার বলে এসেছেন, গাজা নিয়ে তার পরিকল্পনাটি সবাই সাদরে গ্রহণ করেছেন। তবে বাস্তবতা ভিন্ন—বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই ইতোমধ্যে এর বিরোধিতা করে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য রেখেছে।
রাজনৈতিক দলের প্রতি সমর্থনের ভিত্তিতে
রিপাবলিকান পার্টির সমর্থকদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি নেতিবাচক ধারণা রাখেন ৩৭ শতাংশ মানুষ, যা ২০২২ সালে ২৭ শতাংশ ছিল।
অপরদিকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থকদের মধ্যে এ মুহূর্তে ৬৯ শতাংশ ইসরায়েল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা রাখেন, যা ২০২২ সালে ৫৩ শতাংশ ছিল।
উভয় দলের অপেক্ষাকৃত তরুণ সমর্থকদের মধ্যে এই হার আরও বেশি। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি যথাক্রমে ৫০ ও ৭১ শতাংশ।
জরিপের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ‘গত তিন বছরে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সব বয়সের সমর্থকরাই ক্রমবর্ধমান হারে ইসরায়েলের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে আসছেন। এই হার সার্বিকভাবে নয় শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে। শুধু বয়স্কদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব বেড়ে যাওয়ার হার ২৩ শতাংশ পয়েন্ট।’
‘রিপাবলিকানদের ক্ষেত্রে, মূলত তরুণদের মধ্যে মনোভাবের পরিবর্তন দেখা গেছে,’ জরিপে উল্লেখ করা হয়।
ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে
মার্কিন ইহুদিদের মধ্যে ৭৩ শতাংশই ইসরায়েল সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছেন।
ইতিবাচক মনোভাবের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন প্রটেস্টান্টরা (৫৭%)।
তবে ক্যাথোলিক খ্রিস্টানদের মধ্যে ৫৩ শতাংশই নেতানিয়াহুর দেশকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। বলাই বাহুল্য, মুসলিমদের মধ্যে ৮১ শতাংশই ইসরায়েলকে ভালো চোখে দেখেন না।
নেতানিয়াহু সম্পর্কে অভিমত
নেতানিয়াহু সম্পর্কে মনোভাব জানতে চেয়ে করা প্রশ্নের জবাবে ৫২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানান, ইসরায়েলি নেতার প্রতি তাদের একেবারেই ভরসা নেই, বা থাকলেও, তা খুবই কম। তারা মনে করেন না ‘বৈশ্বিক বিষয়গুলোতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন “বিবি” নামেও পরিচিত ইসরায়েলি নেতা।’
মাত্র ৩২ শতাংশ আমেরিকান তার প্রতি ভরসা রাখার কথা জানান।
স্পষ্টতই ডেমোক্র্যাটদের বিরাগভাজন হয়েছেন নেতানিয়াহু—মাত্র ১৫ শতাংশ ডেমোক্র্যাট সমর্থক তার প্রতি ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছেন। রিপাবলিকানদের ক্ষেত্রে ওই হার ৫১ শতাংশ।
এমনকি মার্কিন ইহুদিরাও নেতানিয়াহুর ওপর পুরোপুরি ভরসা রাখেন না। তাদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ নেতানিয়াহুর ওপর বিশ্বাস রাখেন, আর ৫৩ শতাংশ মনে করেন তিনি সঠিক কাজগুলো করছেন না।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে আগ্রহ
গত বছরের জানুয়ারিতে ৬৫ শতাংশ মার্কিনী বলেছিলেন ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধ তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বা শুধুই ‘গুরুত্বপূর্ণ’। তবে এবারের জরিপের ফলে সেই আগ্রহে ভাটার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
এবার মাত্র ৫৪ শতাংশ মানুষ গাজার যুদ্ধকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বা ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেন।
ইহুদিদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ একে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ৭৪ শতাংশ ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেন।