আমাদের অনেকেরই শৈশব কেটেছে রাজ-রাজড়াদের গল্প শুনতে শুনতে। বর্তমানে অনেক সুপার হিট সিনেমা রাজবংশীয় ঘটনার আবর্তে নির্মিত। বাদ নেই বিভিন্ন ভাষার সিরিজগুলোও।
আধুনিক বিশ্ব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে ধাবিত হওয়ার সাথে সাথে প্রাচীন রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা অনেকটাই কমে এসেছে। তারপরও কয়েকটি দেশে রাজতন্ত্র বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে রাজতন্ত্র, কিছু দেশে আছে নামেমাত্র রাজতন্ত্র।
২০২৩ সাল পর্যন্ত অন্তত ৪৩টি দেশে রাজতন্ত্রের তথ্য পাওয়া যায়। রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার দেশগুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন এই প্রতিবেদনে-
সাংবিধানিক রাজতন্ত্র
ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস এখন যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ আরও ১২ সার্বভৌম রাষ্ট্রের রাজা ও রাষ্ট্রপ্রধান। দেশগুলো হল- জ্যামাইকা, বারবাডোজ, বাহামাস, গ্রানাডা, পাপুয়া নিউগিনি, সলোমান আইসল্যান্ড, টুভালু, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাদিনেস, অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বার্বুডা, বেলিজ, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস।
এই দেশগুলো ছাড়াও জাপান, থাইল্যান্ড, ভূটান, কম্বোডিয়াতে রয়েছে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র।
ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, এন্ডোরা, লেসোথো, টোংগা, লাক্সেমবার্গ ও স্পেনেও এই ধরনের রাজতন্ত্র বিদ্যমান।
এইসব দেশের রাজারা সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সরকারের সাথে ক্ষমতা ভাগ করেন।
রাজারা আনুষ্ঠানিক কিছু দায়িত্ব পালন করেন, তবে রাজার কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকে না। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের রাজাকে অবশ্যই তাদের সকল আইনে সাক্ষর করে স্বীকৃতি দিতে হয়। তার স্বাক্ষর ছাড়া সেটি আইনে পরিণত হবে না। তবে নতুন আইন পরিবর্তন বা প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা নেই রাজা চার্লসের।
সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের দেশ থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরা-লং-কর্ন, প্রায় ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ সম্পত্তির মালিক। তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাজা।
ফেডারেল রাজতন্ত্র
মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতে রয়েছে ফেডারেল সুলতানের শাসন।
একটি দেশের বিভিন্ন দেশের রাজ্যগুলোকে নিয়ে একজন রাজার রাজত্বকেই মূলত ফেডারেল রাজতন্ত্র বলা হয়ে থাকে। এই রাজতন্ত্রের অঙ্গরাজ্য সমূহের নিজস্ব সরকার ব্যবস্থা থাকে, আবার কেন্দ্রীয় সরকারও থাকে। রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে থাকেন রাজা। মালয়েশিয়ার রাজ্য প্রধানেরা প্রতি ৫ বছর পরপর একজন রাজা নির্বাচন করে থাকেন।
এবসুলুট মনার্কি বা পূর্ণ রাজতন্ত্র
সৌদি আরব, ভ্যাটিকান সিটি, ওমান, ইসওয়াতিনি দেশগুলোতে পূর্ণ রাজতন্ত্রের চর্চা হয়।
এবসুলুট মনার্কিতে রাজার পূর্ণ এবং নিরঙ্কুশ রাজনৈতিক ক্ষমতা রয়েছে। তারা আইন সংশোধন, প্রত্যাখ্যান বা তৈরি করতে পারে, বিদেশে দেশের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে, রাজনৈতিক নেতাদের নিয়োগ করতে পারে। এসব দেশের রাজবংশীয়রা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গোপন করে, যা তারা প্রজাদের সামনে প্রকাশ করতে বাধ্য নয়।
মিশ্র রাজতন্ত্র
মরক্কো, জর্ডান, মোনাকো, লিকটেনস্টাইন (Liechtenstein), কাতারে প্রচলিত আছে মিশ্র রাজতন্ত্র।
এটি এমন একটি শাসন ব্যবস্থা, যেখানে নিরঙ্কুশ ক্ষমতাধর একজন রাজা দেশের জন্য নির্দিষ্ট উপায়ে ক্ষমতা ভাগ করে দেন ও তাঁদের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করেন।
বর্তমান সময়ে কেউ কেউ অবশ্য দাবি করেন যে আধুনিক দিনে রাজতন্ত্রের কোনো কার্যকারিতা নেই এবং রাজতন্ত্রের বিপুল সম্পদ ও ক্ষমতার উপভোগের অভিযোগ রয়েছে ব্যাপক। একবিংশ শতাব্দীতে রাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কোনো নিশ্চিত বিষয় নয় বললে ভুল হবে না।