ছবি: সংগৃহীত
ভারতীয় সময় শুক্রবার সকালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর বৈঠক হয়। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ‘বন্ধু’ নরেন্দ্র মোদীকে আলিঙ্গন করে অভ্যর্থনা জানান ট্রাম্প। তারপর বৈঠক শুরু হয়।
সেই বৈঠকে ঠিক হয়, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ অনেকটা বাড়বে। ২০৩০ এর মধ্যে তা ৫০ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া হবে। ভারতকে এফ ৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান দেয়া হবে, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা হবে, মুম্বই হামলার পরিকল্পনার পিছনে থাকা সন্ত্রাসী তাহাবুর রানাকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হবে, ভারত অবৈধভাবে ঢোকা সব অভিবাসীকে ফেরত নেবে। খবর ডিডাব্লিউ বাংলা।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। এক ভারতীয় সাংবাদিক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, “বাংলাদেশের বিষয়ে আপনার অভিমত কি? কারণ এটা স্পষ্ট যে বাইডেন প্রশাসনের আমলে মার্কিন ডিপ স্টেট বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত ছিল।”
জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘‘বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমাদের ডিপ স্টেটের কোনো ভূমিকা ছিল না। এটা এমন একটি বিষয় যেটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন এবং সত্যি বলতে, শত শত বছর ধরে এই বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। কিন্তু আমি বাংলাদেশ (প্রসঙ্গটি) প্রধানমন্ত্রীর (মোদী) কাছে ছেড়ে দিচ্ছি।”
প্রধানমন্ত্রী মোদী বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলেননি।
বাণিজ্য চুক্তি হবে
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে মতৈক্য হয়েছে। বলা হয়েছে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে খুব বড় আকারে বাণিজ্য চুক্তি হবে।
ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘আমরা বাণিজ্য নিয়ে ভারতের সঙ্গে কাজ করবো। অদূর ভবিষ্যতে আমরা বড় বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা করবো। সেটা দুই দেশের পক্ষেই খুব ভালো হবে।”
মোদীও জানিয়েছেন, ‘‘খুব দ্রুত বাণিজ্য চুক্তি হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে।”
ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা ঐতিহাসিক বাণিজ্যপথ ধরে কাজ করতে একমত হয়েছি। এই বাণিজ্যপথ ভারত থেকে শুরু হয়ে ইসরায়েল হয়ে, ইতালিকে ছুঁয়ে আমেরিকায় আসবে। সড়ক, রেল এবং সমুদ্রগর্ভস্থ পথে চলা এই বাণিজ্য দুই দেশের অনেক সহযোগী দেশকে ছুঁয়ে যাবে।”
মাসুল নিয়ে
মোদীর সঙ্গে আলোচনায় বসার আগেই ট্রাম্প ঘোষণা করেন, অ্যামেরিকা পারস্পরিক মাসুল নীতি চালু করলো। কোনো দেশে আমেরিকার জিনিসের উপর শুল্ক থাকলে, ঠিক সেই পরিমাণ শুল্ক তাদের জিনিসের উপরও আমেরিকা বসাবে।
যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প বলেছেন, “ভারতে সবচেয়ে বেশি মাসুল চালু আছে। আমি ওদের দোষ দিচ্ছি না। কিন্তু ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য করতে অসুবিধা হতো। আমরা রেসিপ্রোকাল নেশন। ভারত যে পরিমাণ মাসুল নেবে, আমরাও সমপরিমাণ মাসুল নেব। ন্যায্যতার স্বার্থে তা করতে হবে। আমি সহজ পন্থায় গেছি।”
এফ ৩৫ যুদ্ধবিমান পাবে ভারত
ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভারতকে এফ ৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান বিক্রি করা হবে। ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানো হবে।
ট্রাম্প বলেন, আমরা ভারতের সঙ্গে সামরিক অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ বহু হাজার কোটি টাকা বাড়াব। আমরা ভারতকে এপ ৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান বিক্রি করব।
মোদী জানিয়েছেন, ভারত যাতে সামরিক দিক থেকে প্রস্তুত থাকে, তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রমুখ ভূমিকা পালন করছে।
মুম্বাই হামলার অভিযুক্ত প্রত্যর্পণ
মুম্বাইতে ২৬/১১ হামলার অন্যতম অভিযুক্ত তাহায়ুর রানাকে ভারতের হাতে প্রত্যর্পণ করবে অ্যামেরিকা। ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমরা মুম্বইয়ে ২৬/১১-র অন্যতম অভিযুক্ত এবং একজন ভয়ংকর মানুষকে ভারতের হাতে তুলে দিচ্ছি।
যুক্তরাষ্ট্রের তরফে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট এই অভিযুক্তকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী জানিয়েছেন, ভারতে তাকে জেরা করা হবে এবং বিচার হবে।
ভারতীয় তদন্তকারীদের মতে, পাকিস্তানি মূলের ব্যবসায়ী তাহায়ুব রানা মুম্বই হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন।
খালিস্তানিদের প্রসঙ্গ
সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, ভারতের অভিযোগ, খালিস্তানিরাও অ্যামেরিকায় বসে ভারতের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে, তাদেরও কি ভারতের হাতে তুলে দেয়া হবে? বাইডেনের আমলে অ্যামেরিকায় ভারতীয় গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধে অভিয়োগ করা হয়েছিল, সে বিষয়ে ট্রাম্পের মত কী?
ট্রাম্প বলেন, “ভারতের সঙ্গে বাইডেনের সম্পর্ক ভালো ছিল না। তখন অনেক কিছু হয়েছে যা ঠিক নয়। আমরা এখনই একজনকে ভারতের হাতে তুলে দিচ্ছি। আরো এরকম মানুষকে তুলে দেয়া হবে। আমরা অপরাধ নিয়ে ভারতের সঙ্গে কথা বলব।”
অবৈধ অবিবাসীদের ফেরানো হবে
প্রধানমন্ত্রী মোদী জানিয়েছেন, অভিবাসী- প্রশ্নটা শুধু ভারতকে নিয়ে নয়। যে কোনো দেশ থেকেই বেআইনিভাবে কেউ ঢুকলে তার সেখানে থাকার কোনো অধিকার নেই। কোনো ভারতীয় ঢুকলে বেআইনিভাবে আমরা তাকে নিতে প্রস্তুত।
মোদী বলেছেন, এখানেই বিষয়টি শেষ হচ্ছে না। যারা এভাবে আসছে, তারা সাধারণ পরিবারের সন্তান। তারা প্রতিশ্রুতি ও লোভে পড়ে যায়। তারা একটা সিস্টেমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। আমরা চেষ্টা করব, এই সিস্টেমকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে। মানব পাচার যাতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করব।
আদানি প্রসঙ্গ
প্রধানমন্ত্রী মোদীকে প্রশ্ন করা হয়, আদানিকে নিয়ে কি কোনো কথা হয়েছে?
মোদী বলেন, “ভারত গণতান্ত্রিক দেশ। আমাদের সংস্কৃতি, চিন্তা বসুধৈব কুটুম্বকম, সারা বিশ্বের মানুষ আমার আত্মীয়। সব ভারতীয় আমার আত্মীয়। কিন্তু কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে এখানে কথা হয় না।”
ইলন মাস্ক
মোদী জানিয়েছেন, “ইলন মাস্ককে আমি অনেকদিন ধরে চিনি। তখন আমি মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন থেকে চিনি। স্ত্রী ও বাচ্চাদের নিয়ে তিনি দেখা করতে এসেছিলেন।”