তুরস্কে বিরোধীদের ‘সহিংস আন্দোলন’ উসকে দেওয়ার অভিযোগ এরদোয়ানের

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ২৫, ২০২৫, ০১:০৫ পিএম

তুরস্কে বিরোধীদের ‘সহিংস আন্দোলন’ উসকে দেওয়ার অভিযোগ এরদোয়ানের

ছবি: সংগৃহীত

তুরস্কের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে ‘সহিংস আন্দোলন’ উসকে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইপ এরদোয়ান।

এমন সময় তিনি এ মন্তব্য করেন যখন দেশটিতে সোমবার টানা ষষ্ঠ রাতের মতো বিক্ষোভ হয়েছে।

ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোলুকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গত বুধবার বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে। ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে তাকে। খবর বিবিসি বাংলা।

বুধবার আটক করা হলেও গত রোববার তাকে ইমামোলুকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

মেয়রের পদ থেকে বরখাস্ত হওয়া ইমামোলুর দাবি, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যদিও তার এই দাবিকে নাকচ করছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।

ইমামোলুর গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে তুরস্কে এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ চলছে। আন্দোলনরতদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোঁড়া হলে রোববার রাত থেকে বিক্ষোভ তীব্র হয়ে ওঠে।

আগের কয়েক রাতের ধারাবাহিকতায় সোমবারও হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন।

ইস্তাম্বুলের সিটি হলের চারপাশে বিক্ষোভকারীদের সাথে বিপুল সংখ্যক দাঙ্গা পুলিশের উপস্থিতি ছিল। কাছেই জলকামান রাখা ছিল।

তুরস্কের পতাকা হাতে স্লোগান দিচ্ছিল সমবেত জনতা। তবে শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। রোববার রাতের সংঘাতময় অবস্থার আর পুনরাবৃত্তি ঘটেনি।

সরকারের পক্ষ থেকে সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে ১১৩৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এর আগে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বিবৃতিতে, চলমান বিক্ষোভকে ‘ক্ষতিকর’ বলে অভিহিত করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইপ এরদোয়ান।

“উসকানি দিয়ে নাগরিকদের শান্তি বিঘ্নিত করার” জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে দোষারোপও করেন তিনি। রাজধানী আঙ্কারা থেকে দেওয়া ওই ভাষণে এরদোয়ান বিক্ষোভ বন্ধের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “অভিযোগের বিষয়ে কোনো জবাব না দিয়ে বিরোধী দলগুলো বরং পাঁচ দিন ধরে রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য এবং আইনবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে।”

কারাবন্দি একরেম ইমামোলু রিপাবলিকান পিপলস পার্টি-সিএইচপির নেতা।

সোমবার রাতে দলটির চেয়ারম্যান ওজগুর ওজেল সমবেত জনতার উদ্দেশে রাখেন। তিনি বলেন, এই বিক্ষোভ “ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে।”

মঙ্গলবার তিনি সিলিভ্রির কারাগারে ইমামোলুর সাথে দেখা করবেন বলে জানান ওজেল।

সিএইচপি ইমামোলুর মুক্তি ও রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম টিআরটিতে তার বিচার সরাসরি সম্প্রচারের জন্য আবেদন করবে বলেও জানান তিনি।

কারাবন্দি থাকা সত্ত্বেও, সোমবার ইমামোলুকে তুরস্কের ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে রিপাবলিকান পিপলস পার্টি।

সিএইচপির পক্ষ থেকে প্রার্থী হবার দৌঁড়ে ইমামোলুই ছিলেন একমাত্র নেতা। রোববার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনয়নের জন্য ভোট আয়োজন করে সিএইচপি। পাশাপাশি একটি প্রতীকী নির্বাচনেরও আয়োজন করে তারা। তুরস্কের বিভিন্ন জেলায় ব্যালট বাক্স রাখা হয়। আটক মেয়রের প্রতি সমর্থন জানাতে ওই ব্যালট বাক্সগুলোতে নাগরিকদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানায় দলটি।

সিএইচপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রায় দেড় কোটি মানুষ এইদিন ভোট দিয়েছেন।

“অপরাধমূলক সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা, ঘুস গ্রহণ, চাঁদাবাজি, বেআইনিভাবে ব্যক্তিগত তথ্য রেকর্ড এবং টেন্ডার জালিয়াতির” অভিযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয় ইমামোলুকে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হেফাজতে নেওয়ার আগে এক্স অ্যাকাউন্টে ইস্তাম্বুলের মেয়র তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে লিখেছেন, “আমি কখনো মাথা নত করবো না।”

তার গ্রেপ্তারকে তুরস্কের “গণতন্ত্রের ওপর একটি কালো দাগ” বলে অভিহিত করেন ইমামোলু।

রোববার গভীর রাতে আইনজীবীদের মাধ্যমে এক্স-এ শেয়ার করা এক বার্তায় ইমামোলু বিক্ষোভকারীদের শুভেচ্ছা জানান।

তার দল সিএইচপি‍‍`র প্রার্থী নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ভোটাররা দেখিয়ে দিয়েছেন যে এরদোয়ানের বেলায় তাদের মনোভাব হচ্ছে- ‘যথেষ্ট’ হয়েছে।

তুরস্কে সর্বশেষ এতো বড় বিক্ষোভ দেখা গিয়েছিল ২০১৩ সালে। ইস্তাম্বুলে স্থানীয় একটি পার্ক ভেঙে ফেলার প্রতিবাদে ওই বিক্ষোভ দানা বাঁধে।

এবারের বিক্ষোভ শুরুতে শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু রোববার সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন পুলিশ জলকামান, টিয়ার গ্যাস ও পিপার স্প্রে ব্যবহার করে।

ইমামোলুর স্ত্রী দিলেক কায়া ইমামোলুও ইস্তাম্বুলের সিটি হলের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেন।

বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যে ‘অন্যায়’ তার স্বামীর সঙ্গে ঘটেছে তা “প্রতিটি মানুষের বিবেককে স্পর্শ করেছে।”  

গত কয়েক মাসে দেশব্যাপী বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছে তুরস্ক সরকার। বিরোধী রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং বিনোদন জগতের ব্যক্তিত্বরা ছিলেন সেইসব অভিযানের লক্ষ্যবস্তু।

তারই ধারাবাহিকতায় ইমামোলু এবং অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গত বছর দ্বিতীয় মেয়াদে ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন একরেম ইমামোলু। সেই স্থানীয় নির্বাচনে ইস্তাম্বুল এবং আঙ্কারায় জয়ী হয় তার দল সিএইচপি।

এরদোয়ান ক্ষমতায় আসার পর ওই নির্বাচনেই প্রথমবারের মতো তার দল সারা দেশে ব্যালট বাক্সের হিসাব-নিকাশে পরাজিত হয়েছিল।

ব্যক্তিগতভাবে এরদোয়ানের জন্যও ধাক্কা ছিল এটি।

তার রাজনীতিতে বেড়ে ওঠা বিশেষ করে ক্ষমতায় আসার পথে একসময় ইস্তাম্বুলের মেয়রও ছিলেন তিনি।

২২ বছর ধরে তুরস্কের ক্ষমতার শীর্ষে আছেন এরদোয়ান। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি উভয় পদেই দায়িত্ব পালন করেছেন এরদোয়ান।

মেয়াদের বাধ্যবাধকতার কারণে, সংবিধান পরিবর্তন না করলে তিনি ২০২৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।  

Link copied!