বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রের প্রদর্শনী কলকাতায়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

অক্টোবর ১৩, ২০২৩, ১০:৩৮ পিএম

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে  ব্যবহৃত অস্ত্রের প্রদর্শনী কলকাতায়

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫২ বছর পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রদর্শিত হতে চলেছে পাকিস্তানের অস্ত্রের সম্ভার। পুরো সম্ভার না হলেও কিছু অস্ত্র সম্ভবত অক্টোবরের শেষে বা নভেম্বরের শুরুতে প্রদর্শিত হবে। এই অস্ত্র ভারতের সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে যুদ্ধজয়ের পর পাকিস্তানের বাহিনী থেকে জব্দ করেছিল।

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) অস্ত্রভান্ডারের আংশিক গত মঙ্গলবার মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গ বিচার বিভাগীয় পরিষেবার (জুডিশিয়াল সার্ভিস) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রধান সরকারি ট্রাস্টি (সরকারের সম্পত্তির আনুষ্ঠানিক দায়িত্বপ্রাপ্ত) বিপ্লব রায়ের কাছে হস্তান্তর করে।

দীর্ঘ দুই বছর একক ও ব্যক্তিগত চেষ্টার পর এই অস্ত্র হাতে পেলেন বিপ্লব রায়। দুর্গাপূজার পরেই কলকাতার ডালহৌসি স্কয়ার এলাকায় তাঁর দপ্তরে এ অস্ত্রের প্রদর্শনী হবে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতের সেনাবাহিনী বিপুল অস্ত্রের ভান্ডার জব্দ করেছিল। এর একটি অংশ ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিপ্লব রায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রেমিংটন ০৩-৭.৬২ মিমি স্মিথ করোনা রাইফেল, একটি মাস্কেট, ৭৩ মিমি রকেট লঞ্চার, ১২ বোরের সিঙ্গেল ব্যারেল বন্দুক এবং একটি ৭.৬২ মিমি জি-৩ রাইফেল। মধ্যপ্রদেশের টেকানপুরে বিএসএফের প্রশিক্ষণ শিবিরে এ অস্ত্র রাখা ছিল।

বিপ্লব রায় বলেন, টেকানপুর থেকে মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়ারে যাওয়ার পথে বিপ্লব রায় টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন, ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানে সে সময় এই আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি হতো। আমি একাত্তরসহ অন্যান্য যুদ্ধের কিছু অস্ত্রও আনানোর চেষ্টা করছি।

এর মধ্যে টি-৫৫ ট্যাংক (সোভিয়েত ইউনিয়ন) এবং আরসিএল (রিকয়েললেস রকেট লঞ্চার) আসার কথা আছে। রাজ্য জুডিশিয়াল বিচার বিভাগীয় সংগ্রহশালা ও গবেষণাকেন্দ্রে ‘বন্দুক ও কামানের ক্রমবিবর্তন’ নামে এই প্রদর্শনী করার কথা ভাবা হচ্ছে।’

শুধুই অস্ত্রের ক্রমবিবর্তন নিয়ে নয়, আরও নানা জিনিস নিয়ে প্রদর্শনী করার ইচ্ছা রয়েছে রায়ের। তিনি এককভাবে সংগ্রহশালা বানানোর চেষ্টা করছেন। কীভাবে তাঁর এই আগ্রহের সূত্রপাত, তা জানতে গিয়ে বলছিলেন, ২০২১ সালের অক্টোবরে তাঁর দপ্তরের একেবারে নিচের তলা পরিষ্কার করতে গিয়ে কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায়।

তারপর তাঁর সাথে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কথা হয়। তিনিই তাঁকে তিন মাস সময় দিয়েছিলেন এসব সামগ্রী জড়ো করে, পরিষ্কার করে একটি প্রদর্শনী করতে। এর পর থেকে তিনি পশ্চিমবঙ্গে সংগ্রহ চালিয়ে যান। এখন তাঁর সামগ্রী এতটাই জমেছে যে তিনি একটি আন্তর্জাতিক স্তরের সংগ্রহশালা তৈরি করতে সক্ষম।

মৌর্য সাম্রাজ্যের আগের কিছু জিনিসপত্র ছাড়াও কুষাণ, শুঙ্গ, সেন, গুপ্ত, পালা প্রভৃতি সাম্রাজ্যের সামগ্রী রয়েছে। শিল্পসামগ্রী ছাড়াও রয়েছে প্রাচীন মোহর, মৃত্তিকা যুগের মাটির মুদ্রা, নানা ধরনের পাথর, ২০০ বছরের পুরোনো বেনারসি ও দক্ষিণ ভারতীয় শাড়ি।

এ ছাড়া রয়েছে আধুনিক যুগের আগে যুদ্ধে ব্যবহৃত জিনিসপত্র, যেমন শেরশাহের কামান, তলোয়ার, জার্মান, ডাচ, ফ্রেঞ্চ আগ্নেয়াস্ত্র, পলাশীর যুদ্ধ বা সিপাহি বিদ্রোহের সময়ের অস্ত্রশস্ত্র। সংগ্রহে রয়েছে ঐতিহাসিক দলিল ও বিচারপতিদের রায়ের প্রকৃত নথি।

রায় বলেন, ‘আমাকে অবিলম্বে একটা ইউনিট অন্তত চালু করতে হবে। নইলে বিভিন্ন দেশ থেকে আমার কাছে প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী আসবে না। বিশ্বের একাধিক দেশের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এই সংগ্রহশালা পশ্চিমবঙ্গে গড়ে তুলতে চেষ্টা করছেন।’

বিপ্লব রায় বলেন, এসব সামগ্রী খুঁজে বের করা এবং তা নিয়ে আসার কাজটা খুব সহজ হয়নি। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের ব্যবহৃত অস্ত্র আনতে গিয়েও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। গত জানুয়ারিতে পশ্চিমবঙ্গের সংসদ সদস্য নিশীথ প্রামাণিকের নির্দেশ লিখিতভাবে পাওয়ার পরও ওই অস্ত্র তাঁর হাতে পৌঁছাতে অক্টোবর পর্যন্ত সময় লেগেছে।

প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ হাতে পাওয়ার প্রসঙ্গে বিপ্লব রায় বলেন, জিনিসপত্র আমার হাতে তুলে দিতে দীর্ঘদিন ধরে ভাবছেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা। কেন জানি না, তাঁদের মধ্যে একটা কুণ্ঠা কাজ করছে। তাঁরা হয়তো ভাবছেন, আমার খুব প্রচার হচ্ছে।

এমনও হয়েছে এবং হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গেও জেলা শাসকদের বলে দেওয়া হচ্ছে রাজ্যে কোথাও কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী পাওয়া গেলে, তা যেন আমাকে দেওয়া না হয়। এমনকি আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার অনুমতি পাওয়ার পরও অনেক ক্ষেত্রেই এসব সামগ্রী রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে না।

বিপ্লব রায় বলেন, ‘একাত্তরের যুদ্ধের সাথে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁদের দিয়েই এই প্রদর্শনী উদ্বোধন করানোর চেষ্টা করব। তা সম্ভব না হলে প্রথা ভেঙে একেবারে সাধারণ গরিব মানুষ, যুদ্ধ যাঁদের জীবনকে নানাভাবে সমৃদ্ধ বা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তাঁদের দিয়েই এই প্রদর্শনী উদ্বোধন করা হবে বলে আমি ভেবেছি।’

মধ্যপ্রদেশ থেকে অস্ত্র সড়কপথে দু-এক দিনের মধ্যেই পাঠিয়ে দেবে বিএসএফ কর্তৃপক্ষ। আশা করা যায়, আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে পৌঁছে যাবে কলকাতায় বিপ্লব রায়ের দপ্তরে। ২৪ অক্টোবর পূজা শেষ হওয়ার পরেই সুবিধাজনক সময়ে শুরু হবে প্রদর্শনীর তোড়জোড়।

 

Link copied!