গাজা যেন মৃত্যুপুরী; হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

অক্টোবর ১২, ২০২৩, ০৩:২৭ পিএম

গাজা যেন মৃত্যুপুরী; হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল

ইসরায়েলের বিমান হামলায় বিধ্বস্ত গাজা। ছবি: রয়টার্স।

ইসরায়েলে হামাসের রকেট হামলার মধ্য দিয়ে যে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ তা পঞ্চম দিনে এসে ২৩০০ মানুষের মৃতের তালিকা তৈরি করলো। এর মধ্যে ইসরায়েলি ১২০০ এবং ফিলিস্তিনি ১১০০। এ তালিকায় বাড়তে যাচ্ছে আরও নাম। কেন না আহত হয়েছেন প্রায় ছয় হাজার মানুষ।

এই মৃত্যুর তালিকায় যখন নতুন নাম বাড়ছেই তখন বিরোধী নেতা বেনি গানৎসকে নিয়ে যুদ্ধকালীন সরকার গঠন করেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনে ব্যাপক হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। খাদ্য,পানি ও বিদ্যুতের সংকটে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে গাজা। অব্যাহত বিমান হামলা চালিয়ে এলাকাটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইসরায়েল।

গাজার হাসপাতালগুলোতে জায়গা নেই। ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতিও তীব্র হয়েছে; নেই বিদ্যুৎও।  জ্বালানির অভাবে গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। আপাতত জেনারেটর দিয়ে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে সেটিও বৃহস্পতিবারের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

বুধবার চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স সতর্ক করে বলেছে, গাজায় অতিদ্রুত মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এ পর্যন্ত কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন; বহু লোক খাদ্য ও বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন। পানি ও জ্বালানির সংকট দেখা দিয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘনবসতিপূর্ণ গাজায় এমনিতেই মানবিক সংকট বিদ্যমান। ইসরায়েলের হামলা সেটিকে আরও গভীর করেছে। হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় সর্বাত্মক অবরোধ দিয়েছে। সেখানে সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার পর গাজার ২২ লাখ মানুষের জন্য খাদ্য, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও পানি দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত শনিবার থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় জাতিসংঘের অন্তত ৯ কর্মী নিহত হয়েছেন। গাজায় রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় অধিকৃত পশ্চিম তীরে অন্তত ৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৯ জন।

অন্যদিকে ইসরায়েলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামাস সেখানকার একটি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে, কিন্তু এতে কেউ হতাহত হয়নি। তারা বলছেন, ১২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েল-হামাসের চলমান যুদ্ধে গাজার শরণার্থী শিবিরগুলোতে সংকট বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় উদ্বাস্তুদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ১০ কোটি ৪০ লাখ ডলার সহায়তা চেয়েছে ফিলিস্তিনের শরণার্থীদের সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত জাতিসংঘভিত্তিক সংস্থা ইউনাইটেড নেশন্স রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইনি রেফিউজি ইন দ্য নেয়ার ইস্ট (ইউএনআরডব্লিউএ)।

বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজায় অবস্থিত শরণার্থী শিবিরগুলোতে আগে থেকেই প্রায় আড়াই লাখ শরণার্থী ছিলেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গত কয়েক দিনে এই শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন আরও আড়াই লাখেরও বেশি শরণার্থী। নতুন যোগ হওয়া এই অতিরিক্ত শরণার্থীদের খাদ্য, আশ্রয়, চিকিৎসা ও অন্যান্য জরুরি সুরক্ষার জন্য আমরা এই অর্থ চাইছি।’

অবিলম্বে গাজায় মানবিক ত্রাণসহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘গাজায় অবশ্যই খাবার, পানি, জ্বালানিসহ জরুরি জীবনরক্ষাকারী পণ্য যেতে দিতে হবে। আমাদের এখন দ্রুত ও নির্বিঘ্ন মানবিক সহায়তা প্রদানের সুযোগ পেতে হবে।’

প্রসঙ্গত, গত শনিবার সকালে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাস কয়েক বছরের মধ্যে ইসরাইলের ওপর সবচেয়ে বড় হামলা চালায়। ইসরাইলের ভূখণ্ডে পাঁচ হাজারেরও বেশি রকেট হামলা করে সংগঠনটি। এ রকেট হামলার ৫ ঘণ্টা পর যুদ্ধের ঘোষণা দেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

Link copied!