ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫, ১২:১৯ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে জিম্মিদের মুক্তি দেয়ার পরবর্তী কার্যক্রম স্থগিত করার কথা জানিয়েছেন হামাসের সামরিক শাখার একজন মুখপাত্র। ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে শনিবার গাজায় আটকে থাকা তিন জিম্মির মুক্তি লাভের কথা রয়েছে।
হামাসের ঘোষণাকে ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরিপূর্ণ লঙ্ঘন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎয।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজায় আটকে থাকা ‘সব’ জিম্মি শনিবারের মধ্যে ফেরত না দেয়া হলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল করা উচিত।
তিনি বলেন, “আমি বলব শনিবার ১২টার মধ্যে তাদের ফেরত দেয়া উচিত...সবাইকে... ছিটেফোঁটা নয়...দুই, এক বা তিন চারজন নয়।”
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।
এতে বলা হয়, সব জিম্মিকে মুক্তি না দেয়া হলে কঠোর ব্যবস্থার হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি ইসরায়েলের দিক থেকে প্রতিশোধ নেয়ার কথা বোঝাচ্ছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, “আপনারা দেখবেন, তারাও দেখবে। হামাসও দেখবে আমি কী বোঝাচ্ছি।”
হামাসের ঘোষণা এসেছে তেল আবিবে ইসরায়েলি জিম্মি আলন ওহেলের ২৪তম জন্মদিন উদযাপনে লোকজনের জমায়েত হবার আগ মুহূর্তে। ২০২৩ সালের ০৭ অক্টোবর তাকে নোভা ফেস্টিভ্যাল থেকে জিম্মি করে নেয়া হয়েছিলো।
জমায়েত হওয়া লোকজনের মধ্যে ছিলেন মিয়া গোল্ডস্টেইন। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, বাকি জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে কঠিন চাপ দেয়া দরকার। এ নিয়ে হামাসের বিলম্ব করাকে ‘ভয়ংকর’ উল্লেখ করেন তিনি।
জাতিসংঘের মুখপাত্র ফারহান হক বলেছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি কোনো বিলম্ব ঘটানোই হবে একটা ইস্যু এবং সব পক্ষকে তাদের আগের করা সমঝোতা ও সময়সীমা মেনে চলা উচিত।
এএফপি জানিয়েছে যে হামাস বলেছে ইসরায়েল সব বাধ্যবাধকতা ঠিক মতো মেনে চললে জিম্মি বিনিময়ের দরজা খোলা থাকবে।
হামাসের মুখপাত্র আবু ওবেইদা উত্তর গাজায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ফেরাতে বিলম্ব করা, মানুষের ওপর গুলি চালানো এবং মানবিক সহায়তা অনুমোদনে ব্যর্থতার অভিযোগ করেছেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে।
হামাসের ঘোষণায় ট্রাম্প বা যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নিয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। তবে এটি এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দিক থেকে আসা একটি শক্ত মন্তব্যের পর। ট্রাম্প গাজার মালিকানা নিয়ে এটিকে উন্নয়নের কথা বলেছিলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবে গাজার অধিবাসীদের ফিলিস্তিনের বাইরে সরিয়ে নেয়ার কথাও ছিল। একই সঙ্গে তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ‘বিপ্লবী ও সৃজনশীল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
হামাসের বিবৃতিটি হলো দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দোষারোপের ধারাবাহিকতায় সবশেষ ঘটনা।
ইসরায়েল উত্তর গাজার বাস্তুচ্যুতদের ফেরার অনুমতি দিতে দুই দিন বিলম্ব করেছে। তারা একটি নারী জিম্মিকে মুক্তি দেয়ার অঙ্গীকার না মানার অভিযোগ এনেছে হামাসের বিরুদ্ধে।
এছাড়া গাজায় ইসরায়েলি জিম্মিদের লোকজন জমায়েত করে যেভাবে মুক্তি দেয়া হয়েছে তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দিদের বহনকারী বাস পশ্চিম তীরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব করিয়েছে।
শনিবার যাদের মুক্তি দেয়া হবে তাদের নাম ঘোষণার যে সময়সীমা ছিল শুক্রবার হামাস তা কিছু সময়ের জন্য অতিক্রম করেছিলো। চুক্তি অনুযায়ী এটি ‘অবশ্য করণীয়’।
গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরুর পর ১৬ ইসরায়েলি ও পাঁচ জন থাই জিম্মি মুক্তি পেয়েছেন। বিনিময়ে ইসরায়েলের ৫৬৬ জন বন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
তিন সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে মোট ৩৩ জন জিম্মি ও ১৯০০ বন্দি বিনিময় হওয়ার কথা রয়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে ৩৩ জনের মধ্যে আট জন আর জীবিত নেই।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামলার সময় হামাস মোট ২৫১ জনকে জিম্মি করেছিলো। সে সময় মারা গিয়েছিলো প্রায় বারশ মানুষ।
জবাবে ইসরায়েল ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায় এবং এতে মোট ৪৮ হাজার ফিলিস্তিনি মারা গেছেন বলে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।