কানাডার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে ভারত ভয়াবহ ভুল করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) বিদেশি হস্তক্ষেপের বিষয়ে একটি তদন্তে ট্রুডো এই অভিযোগ করেন।
আলজাজিরার খবর অনুযায়ী, ট্রুডোর অভিযোগ, তার দেশে সহিংসতা সংগঠিত করছে ভারতের সরকার।
তিনি বলেন, শিখ ভিন্নমতাবলম্বীদের টার্গেটের মাধ্যমে ভারত কর্তৃক কানাডার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করার স্পষ্টতর ইঙ্গিত রয়েছে। ভারতের এই ধরনের কার্যকলাপ ভয়াবহ ভুল।
শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যা নিয়ে কানাডা ও ভারতের একে অপরের কূটনীতিকদের বহিষ্কারের দুইদিন পর এমন বক্তব্য দিলেন ট্রুডো।
বুধবারের তদন্তে ট্রুডো বলেন, নিজ্জরের হত্যাকাণ্ড আরও বৃহত্তর ভারতীয় অভিযানের অংশ ছিল। এতে কানাডার অভ্যন্তরে ভিন্নমতাবলম্বীদের নিয়মিতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, কানাডিয়ানদের প্রতি সহিংসতা ভারতীয় সরকারের দ্বারা সক্ষম করা হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই তাদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। যখন ভারতের কাছে এই অভিযোগগুলো উপস্থাপন করা হয়, তখন তারা কেবল সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি করেছে।
কানাডার সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদারের সঙ্গে বিবাদে জড়াতে না চাইলেও ট্রুডো বলেন, কানাডার সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে তিনি কোনভাবেই পিছপা হবেন না।
ভারত ও কানাডার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা কূটনৈতিক বিবাদ চলতি সপ্তাহে আবারও মাথাচারা দিয়ে উঠে। সম্প্রতি কানাডা সরকার অভিযোগ করেছে, সে দেশে অবস্থানরত ভারতীয় প্রতিনিধিরা এমন সব কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছেন; যা কানাডার নাগরিকদের নিরাপত্তা হুমকিতে ফেলছে। অভিযোগের জের ধরে দুই দেশই একে অপরের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে।
অবশ্য নিজ্জর নিহত হওয়ার পর ২০২৩ সালে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সে দেশের সংসদে ওই হত্যার সঙ্গে ভারত জড়িত বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। এ নিয়ে তখন থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে ব্যাপক অবনতি হয়। এমনকি ভারত থেকে কানাডার কয়েক ডজন কূটনৈতিককে প্রত্যাহার করতে চাপ দেয় নয়াদিল্লি। এ ছাড়া কানাডার নাগরিকদের জন্য ভিসা সেবা স্থগিত করে দেয় ভারত সরকার।
গত সোমবার সাম্প্রতিকতম উত্তেজনার শুরু হয়। ওই দিন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা ‘কূটনৈতিক যোগাযোগে’ ইঙ্গিত পেয়েছে যে কানাডায় নিজ্জর হত্যার ঘটনার তদন্তে সেখানকার ভারতীয় কূটনীতিকেরা ‘ফৌজদারি অপরাধে সংশ্লিষ্ট’ থাকতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে ভারত দীর্ঘদিন ধরে ট্রুডোর অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। সোমবার ভারতীয় কূটনীতিকদের ওপর কানাডার তদন্তের পদক্ষেপকে প্রত্যাখ্যান করে। তাদের দাবি, রাজনৈতিক এজেন্ডার অংশ হিসেবে এই কাজ করছেন ট্রুডো।
২০২৩ সালে কানাডায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন খালিস্তানপন্থী নেতা নিজ্জর। তিনি ভারতের পাঞ্জাবে শিখ সম্প্রদায়ের জন্য ‘খালিস্তান’ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ছিলেন। নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই এর সঙ্গে ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে আসছিলেন ট্রুডো। তবে সে অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে ভারত সরকার।