যুক্তরাজ্যের সাউথপোর্টে ৩ জন মেয়ে শিশু নিহতের ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। কট্টর ডানপন্থীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে দেশটিতে। এতে ৯০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দেশটির বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে আরও সংঘাত বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এর আগে গত সোমবার যুক্তরাজ্যের সাউথপোর্টে নাচের ক্লাসে এলেক্স রুদাকুবানার (১৭) নামে এক কিশোরের ছুরি হামলায় ৩ শিশু নিহত হয়। তাদের সবার বয়স ৬-৯ বছরের মধ্যে।
হামলায় আরও সাতজন আহতের খবর এসেছে। ঘটনার সন্দেহভাজন হিসেবে ১৭ বছর বয়সের এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এই সুযোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, গ্রেপ্তার হওয়া ওই সন্দেহভাজন একজন ‘উগ্র ইসলামপন্থী অভিবাসী’। একে কেন্দ্র করে অভিবাসনবিরোধীরা অন্য এলাকা থেকে সাউথপোর্টে গিয়ে জড়ো হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায় ও একটি মসজিদে হামলা করে। পর পর দুই দিন ধরে চলে এই দাঙ্গা ও বিক্ষোভ।
প্রসঙ্গত, বুধবার রাত থেকে সান্দারল্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ বাধে। পরে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া তারা পুলিশের ওপর বিয়ারের বোতল ও পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে ও গাড়িতে অগ্নি সংযোগ করে। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এই সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে ‘কট্টর ডানপন্থীদের প্রতিহিংসাকে’ এর জন্য দায়ী করেছেন।
সংঘাতের শেষ দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেছেন, রাস্তায় আইন-শৃঙ্খলার লঙ্ঘন ঠেকাতে যুক্তরাজ্যের পুলিশকে আরও বেশি ক্ষমতা দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে নাগরিকদেরকেও সতর্ক করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। এদিকে বিক্ষোভকারীরা অনলাইনে সান্ডারল্যান্ড, বেলফাস্ট, কার্ডিফ, লিভারপুল, ম্যানচেস্টারসহ বিভিন্ন শহরে আগামী দিনগুলোতে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। তারা ‘যথেষ্ট’ ‘যথেষ্ট’, ‘আমাদের সন্তানদের বাঁচান’সহ বিভিন্ন বক্তব্য লেখা স্লোগান-প্ল্যাকার্ড দেখান।
প্রচারণাকারী গোষ্ঠী ‘হোপ নট হেইট’ জানায়, মঙ্গলবার সাউথপোর্টে যে দাঙ্গা হয়েছে সেটা ব্যাপক আকারে গুজব ছড়ানোর ফল। অনলাইনে এর বেশির ভাগই ছড়িয়েছে কট্টর ডানপন্থী অ্যাকাউন্টগুলো থেকে। ওই গুজবে বলা হয়েছে, সন্দেহভাজন একজন শরণার্থী অথবা অভিবাসী। চ্যানেল থ্রি নাও ওয়েবসাইটেও এই মিথ্যা দাবি চলে আসে আর তাতে বলা হয়, সন্দেহভাজন একজন নথিবিহীন অভিবাসী। একটি ছোট নৌকাযোগে সে ইংল্যান্ডে এসেছে। পরে চ্যানেল থ্রি নাও ভুল তথ্যের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে জানায়, তাদের প্রকাশ করা তথ্যটি ‘বিভ্রান্তিকর’ ও ‘ভুল’ ছিল। ফেসবুক, এক্স, ইনস্টাগ্রাম ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই গুজব অন্তত ১ কোটি ৫৭ লাখবার দেখা হয়েছে বলে রয়টার্সের এক বিশ্লেষণ দেখিয়েছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান