ডিসেম্বর ২১, ২০২৩, ১১:৫৪ এএম
মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্বিচার হামলা এবং জাতিগত সংখ্যালঘু বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিষিদ্ধ ক্লাস্টার অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ এনেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর)সংস্থাটি মায়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানান হয়েছে।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর এবারই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে দেশটির জান্তা সরকার।
চীন সীমান্তবর্তী শান রাজ্য এবং পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে সামরিক ঘাঁটিতে জাতিগত বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলোর সমন্বয়ে গঠিত স্থানীয় প্রতিরোধ জোটের ক্রমাগত আক্রমণের মুখে পড়ছে সামরিক বাহিনী। ভারত সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের শহর খামপাতের দখল হারিয়েছে জান্তা।
শান রাজ্যে চলতি মাসের শুরুতে বিমান হামলায় জান্তার বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের অভিযোগ এনেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, অ্যামনেস্টির অস্ত্র তদন্তকারীরা প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ করে ক্লাস্টার বোমার সন্দেহের সপক্ষে প্রমাণ হাজির করেছে।
বিদ্রোহী তিন গ্রুপের জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ এর অন্যতম তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) দাবি করেছে, সেই হামলায় একজন বেসামরিক নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন।
অ্যামনেস্টির ক্রাইসিস রেসপন্স প্রোগ্রামের পরিচালক ম্যাট ওয়েলস বলেছেন, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণের নৃশংস প্রতিক্রিয়া হিসেবে মায়ানমারের সামরিক বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের ওপর কেবল রক্তক্ষয়ী হামলাই চালাচ্ছে না, তাদের জন্য রেখে যাচ্ছে বিধ্বংসী পরিণতি।
রাখাইন রাজ্যের পাউক তাও-তে বেসামরিক নাগরিকেরা লুটপাট, নির্বিচারে গ্রেফতার, অমানবিক আচরণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ১০ জন বেসামরিক নাগরিকের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে অ্যামনেস্টি এমনটা বলেছেন।
অ্যামনেস্টির এই অভিযোগের আগেই জারি করা এক বিবৃতিতে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স দাবি করেছিল যে, সামরিক জান্তা নিয়মিতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের গ্রেফতার, তাদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার এবং নির্যাতনের হুমকি দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ অক্টোবর থেকে চীন সীমান্তসংলগ্ন অঞ্চলের বিদ্রোহী গোষ্ঠী তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি, দ্য মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি ও আরাকান আর্মি জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে অপারেশন ১০২৭ শুরু করে। সেই অপারেশন শুরুর পর থেকে বিগত প্রায় দুই মাসে এই তিন বাহিনীর কাছে সাড়ে ছয় শতাধিক জান্তা সৈন্য আত্মসমর্পণ করেছে। সর্বশেষ শান রাজ্যের সাখান ঠিট কোনে নামক একটি ঘাঁটির প্রায় ১৫০ জন জান্তা সেনা আত্মসমর্পণ করেছে।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির কাছে ওই দেড় শতাধিক সৈন্য আত্মসমর্পণ করে।
এর আগে বিগত ২৭ অক্টোবরের পর থেকে শান রাজ্যে অন্তত ৪৫০ জন সেনা তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি, দ্য মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি ও আরাকান আর্মি জান্তা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এই সময়ে এই তিন বাহিনী জান্তা বাহিনীর অন্তত ২৭০টি ঘাঁটি দখলে নিয়েছে।
মিয়ানমারের সামরিক সরকার স্বীকার করেছে, তারা জান্তাবিরোধী বাহিনীর ভারি আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছে।