ডিম নিয়ে পুতিনের ক্ষমা প্রার্থনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ডিসেম্বর ১৭, ২০২৩, ০৭:৫১ পিএম

ডিম নিয়ে পুতিনের ক্ষমা প্রার্থনা

ছবি: সংগৃহীত

ডিমের দাম বাড়ার কারণে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ডিমের জন্য হাহাকার করছে রাশিয়ার সাধারণ মানুষ। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় ডিমের দামও বাড়ছে প্রতি সপ্তাহে। 

ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, বছরের শুরুতে দেশটিতে ডিমের যে দাম ছিল তার থেকে এখন ৪২ শতাংশ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।  

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভার্চুয়াল সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে ইরিনা আকোপোভা নামে এক পেনশনভোগী নারী ডিমের অস্বাভাবিক দাম সম্পর্কে অভিযোগ করলে পুতিন এ দুঃখ প্রকাশ করেন।  

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরিনা তার রান্নাঘর থেকে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পুতিনের সাথে যুক্ত হন। তিনি ডিম ও মুরগীর মাংসের আকাশচুম্বী দাম সম্পর্কে পুতিনের কাছে অভিযোগ করেন। 

ইরিনা বলেন, আমরা পেনশন থেকে যে টাকা পাই, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে এ অর্থ দিয়ে চলা এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তার এমন প্রশ্ন থেকে রাশিয়ার জীবনযাত্রার ব্যয় সম্পর্কে সাধারণ নাগরিকদের উদ্বেগ ফুটে উঠেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে দীর্ঘ একটি সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ মানুষের প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছে ডিমের দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। জবাবে ডিমের দাম বৃদ্ধির জন্য যথা সময়ে ডিম আমদানি করতে সরকারের ব্যর্থতাকে স্বীকার করেছেন।

পুতিন বলেন, ‘সময়মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যায় ডিম আমদানি করা হয়নি। আমি এই বিষয়ে দুঃখিত এবং ক্ষমা প্রার্থনা করছি। কথা দিচ্ছি, পরিস্থিতি খুব দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।’

রুশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগামী বছরের প্রথমার্ধে ১২০ কোটি ডিম আমদানি করে ডিমের দামে লাগাম টানা হবে। বৃহস্পতিবারের অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির কাছে যারা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এসেছেন, তাদের মধ্যে কয়েকজন তাৎক্ষণিক সমাধান পেয়েছেন।

আগামী বছরের মার্চে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পঞ্চমবারের মতো প্রার্থী হয়েছেন তিনি। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো সব প্রার্থীকে জেলে কিংবা নির্বাসনে পাঠিয়ে আসন্ন নির্বাচনেও নিশ্চিত বিজয়ের মুখে আছেন তিনি। এ অবস্থায় ডিমের জন্য গণ অসন্তোষের মতো অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে চাইছেন না তিনি।

রুশ গণমাধ্যমগুলোর তথ্য মতে, সাইবেরিয়ার নভোসিবিরস্ক অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ডিমের দোকানগুলোর সামনে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। বিষয়টিকে সোভিয়েত আমলের খাদ্য সংকটের সাথে তুলনা করছেন অনেকে। 

প্রচুর চাহিদার মুখে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ কয়টি ডিম কিনতে পারবেন তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন খুচরা দোকানিরা। আর বেশি দামে যারা ডিম কিনতে পারছেন না তাদেরও আলাদাভাবে কিছু ডিম সরবরাহের চেষ্টা করছে তারা।

এদিকে আর ক’দিন পরই অনুষ্ঠিত হবে খ্রিষ্ট ধর্মীয় প্রধান উৎসব ‘ক্রিসমাস’, চলে এসেছে নতুন বছরও। এসব উৎসবে রুশ পরিবারগুলোর ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খাদ্য তৈরিতে ডিমের কোনো বিকল্প নেই।

জানা গেছে, ডিমের দাম স্বাভাবিক করার জন্য রুশ কর্তৃপক্ষ তাদের তথাকথিত বন্ধু রাষ্ট্রগুলো থেকে কোনো শুল্ক ছাড়াই ১২০ কোটি ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘এই সিদ্ধান্ত ডিমের বাজারের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং সরবরাহ বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।’

একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের বেশির ভাগ সময় ধরেই রাশিয়ানরা ত্বরিত ভোক্তা মুদ্রাস্ফীতির মুখোমুখি হয়েছে। বিষয়টি ডিমের দামের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলেছে। 

ধারণা করা হচ্ছে, অনেক পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় রাশিয়ার মানুষেরা সস্তা ও বিকল্প পণ্যগুলোর দিকে ধাবিত হচ্ছেন। কিন্তু যেসব পণ্যের দিকে তারা ধাবিত হচ্ছেন চাহিদার  সাথে সাথে সেগুলোর দামও বেড়ে যাচ্ছে।
 

Link copied!