অক্টোবর ১, ২০২৫, ০৫:৩০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতি বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এগিয়ে চলছে ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’। ত্রাণবাহী ছোট ছোট নৌকাগুলো এখন গাজার কাছে ‘চরম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়’ পৌঁছেছে। অর্থাৎ, গাজা থেকে তারা প্রায় ১২০ নটিক্যাল মাইল দূরে। এর আগে যতবার ওই এলাকায় ফ্লোটিলা পৌঁছানোর চেষ্টা চালায় সবগুলোর ওপরই হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
বুধবার, ০১ অক্টোবর আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এসব ছোট ছোট নৌকায় সারাবিশ্ব থেকে আসা মানবাধিকারকর্মীরা আছেন। তারা খাবার, ওষুধ ও কাপড়সহ নিত্যপণ্য নিয়ে সাগরপথে গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। গাজা উপত্যকার ওপর ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে তারা সেসব ত্রাণসামগ্রী দুর্গত মানুষদের হাতে তুলে দিতে চান।
সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়—জাতিসংঘের বিশেষদূত ফ্রান্সিসকা আলবানিজ, কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী মন্ত্রী ম্যাট থিসলথওয়াইট, তুরস্কের সবচেয়ে তরুণ আইনপ্রণেতা জেহরানুর আয়দেমির ও অন্যান্য শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তি ও মানবাধিকার কর্মীরা ফ্লোটিলার পূর্ণ নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন।
এতে আরও বলা হয়—স্পেন ও ইতালি থেকে মানবাধিকারকর্মীরা ফ্লোটিলা নিয়ে ভূমধ্যসাগরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় প্রবেশ করেছে। তুরস্কের ড্রোনগুলো সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সবার নিরাপত্তার জন্য কোনো কোনো নৌকা থেকে লাইভ সম্প্রচার করা হচ্ছে।
ইসরায়েল এই ফ্লোটিলার গতি রোধ করতে বদ্ধপরিকর। ইসরায়েলি বাহিনীর ভাষ্য, গাজায় অবরোধ ‘আইনসিদ্ধ’। ওই স্বেচ্ছাসেবীরা সেই ‘আইনগত অবরোধ ভাঙার’ চেষ্টা করছেন। কিন্তু, আন্তর্জাতিক আইনে যেকোনো পরিস্থিতিতে দুর্গতদের কাছে মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার কথা পরিষ্কার বলা আছে।
আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর পৌনে দুইটার দিকে ফ্লোটিলা অভিযানের অন্যতম আয়োজক ডেভিড অ্যাডলার সমাজমাধ্যম এক্স-এ লিখেন, ‘আশঙ্কা করছি, এটি আমার শেষ চিঠি। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে বলছি। এখন গাজার উপকূল থেকে প্রায় ১২০ নটিক্যাল মাইল দূরে আছি।’
তিনি আরও লেখেন, ‘গত রাতে ইসরাইলি নৌবাহিনীর কয়েকটি জাহাজ আমাদের হুমকি দেয়। আমাদের জাহাজে আক্রমণ করে, আমাদের ক্রুদের ভয় দেখায় ও আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।’
ইসরায়েলি বাহিনীর এ ধরনের কর্মকাণ্ড আগেও দেখা গিয়েছিল। ডেভিডের ভয়—ইসরায়েলি বাহিনী আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে তাদেরকে অপহরণ করতে পারে। তাই ফ্লোটিলায় অংশগ্রহণকারীরা তাদের মোবাইল ফোন ও সিসিটিভির মাধ্যমে পরিস্থিতি বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করছেন, যাতে ইসরায়েলি বাহিনীর অপরাধমূলক কাজ প্রকাশ্যে আসে।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী মন্ত্রী ম্যাট থিসলথওয়াইট গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় ড্রোন হামলার অভিযোগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ছয় অস্ট্রেলিয়ান গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙতে এসব ফ্লোটিলায় অংশ নিয়েছেন।
তিনি আশা করেন, সব পক্ষই আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবেন। সবাই অবৈধ কাজ ও সংঘাত থেকে বিরত থাকবেন।
ইসরায়েলি নৌবাহিনীর বিরুদ্ধে ফ্লোটিলায় হামলা ও ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ১৫ মিনিটের জন্য বিঘ্নিত করার অভিযোগ উঠেছে। ফ্লোটিলা যতই গাজার জলসীমার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পরিস্থিতি ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।
ফ্লোটিলায় অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহ দিয়ে তুরস্কের আইনপ্রণেতা জেহরানুর আয়দেমি এক্স পোস্টে বলেন, ‘আমাদের চোখ, কান ও হৃদয় সুমুদ ফ্লোটিলার সঙ্গে আছে।’