জি-২০ সম্মেলন

রাশিয়ার ‘আগ্রাসী’ তকমা এড়িয়ে ইউক্রেনে শান্তির আহ্বান

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩, ০৯:১৫ পিএম

রাশিয়ার ‘আগ্রাসী’ তকমা এড়িয়ে ইউক্রেনে শান্তির আহ্বান

চলতি বছরের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘোষণায় ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিষয়ে এক ‘আনুষঙ্গিক অনুচ্ছেদে’ ‘রাশিয়া’ শব্দটি উল্লেখযোগ্যভাবে বাদ দেওয়া সত্ত্বেও, সম্মেলনকে একটি সাফল্য হিসাবে অভিহিত করেছে হোয়াইট হাউজ। তবে অনুচ্ছেদে ‘রাশিয়া’ শব্দটি বিশেষভাবে বাদ দেওয়ায় এর তীব্র সমালোচনা করেছে ইউক্রেন সরকার।

বৈঠকের প্রথম দিনে নয়াদিল্লিতে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সালিভান বলেন, "ভারতের সভাপতিত্বের জন্য এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সম্পর্কে আস্থা ভোটে জি-২০ একত্রিত হতে পারায়, এবারের সম্মেলনটি বিশেষ মাইল ফলক অর্জনে সক্ষম হয়েছে।"

বিশ্বের দুই প্রধান নেতা - রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অনুপস্থিতির কারণেও এবারের শীর্ষ সম্মেলনটি বিশেভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল। উভয় দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সালিভান সাংবাদিকদের বলেন, "জি-২০ বিবৃতিতে ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলাফলমূলক অনুচ্ছেদগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আর আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি এই নীতির পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য একটি খুব ভাল কাজ হয়েছে যে, দেশগুলি আঞ্চলিক ভূখণ্ড অধিগ্রহণের জন্য তাদের পেশিশক্তি ব্যবহার করতে পারে না।"

২৯ পৃষ্ঠার এই বিবৃতিটি বাণিজ্য, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানের সংস্কার, প্রযুক্তি, কর ব্যবস্থা এবং লিঙ্গ সমতা অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলিকে বিস্তৃত করেছে। এতে, ২০টি প্রধান এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির গোষ্ঠীর নেতারা "ইউক্রেনে ব্যাপক, ন্যায্য এবং টেকসই শান্তির" আহ্বান জানিয়েছেন - তবে রাশিয়াকে ‘আগ্রাসী’ হিসাবে অভিহিত করা থেকে বিরত ছিলেন। এছাড়া গ্রুপটি পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার সম্পূর্ণ "অগ্রহণযোগ্য" বলেও সম্মত হয়েছে।

অন্যদিকে, এক ফেইসবুক পোস্টে, ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র ওলেগ নিকোলেনকো বলেছেন, "ইউক্রেন অংশীদারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে , যারা পাঠ্যটিতে বেশ কিছু শক্তিশালী শব্দাবলী অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছেন।"

তিনি ব্যাপক ভাবে সম্পাদিত বিবৃতিটির একটি সংস্করণও পেশ করেন, যেখানে "পরিস্থিতির বিভিন্ন মতামত এবং মূল্যায়ন সন্নিবেশিত ছিল।" বিবৃতিটি পুনঃলিখন করে, "ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসনের যুদ্ধের বিষয়ে, জি২০ সদস্যরা দ্ব্যর্থহীনভাবে এর নিন্দা করেছে এবং অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য মস্কোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।"

নয়াদিল্লি সম্মেলনের শুরুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশ্ব নেতাদের প্রতি ঐকমত্যের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, "জি২০-এর সভাপতি হিসাবে, ভারত সমগ্র বিশ্বের কাছে বিশ্বব্যাপী এই আস্থার ঘাটতিকে সবার আগে বিশ্বাসে রূপান্তরিত করার আহ্বান জানাচ্ছে। এখন আমাদের সকলের একসাথে চলার সময়।"

হোয়াইট হাউজ ভিওএ-কে জানিয়েছে, ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য ওয়াশিংটনের যুক্তি সংঘাতের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক পরিণতির উপর জোর দেয়।

নয়াদিল্লিতে শীর্ষ সম্মেলনের বাইরে ভিওএ-এর সাথে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কৌশলগত যোগাযোগের পরিচালক জন কার্বি বলেছেন, “ইউক্রেনের যুদ্ধ খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা, মুদ্রাস্ফীতির চাপের ক্ষেত্রে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলির উপর একটি বিশাল চাপ সৃষ্টি করেছে। মিঃ পুতিনের যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে যে প্রভাব ফেলেছে, তা আপনি এড়িয়ে যেতে পারবেন না।”

কার্বি বলেন, “আর প্রেসিডেন্ট যা করতে চান – তা হল, তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করবেন, কেননা এই যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলির জন্য বিনিয়োগের সুযোগ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ঋণ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে, যা সর্বোচ্চ গুণগত মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্বচ্ছ, এবং এটি সত্যিকার অর্থে যতটা সম্ভব তাদের স্থানীয় চাহিদা পূরণ করবে”।

টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের জি-২০ গবেষণা গ্রুপের প্রধান অধ্যাপক জন কার্টন বলেছেন, কিন্তু বিশ্বের ২০টি প্রধান অর্থনীতির নেতারা আরও সাহসী হতে পারতেন, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায়।

এই ইস্যুতে, বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বিভিন্ন জাতীয় পরিস্থিতির আলোকে ন্যায্যতা এবং সাধারণ কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব এবং নিজ নিজ ক্ষমতার নীতি বাস্তবায়নে, আমাদের নেতৃত্বের ভূমিকার প্রতি আরও মনোযোগী হতে হবে। সেই সাথে, আমরা প্যারিস চুক্তি এবং এর তাপমাত্রা হ্রাসের লক্ষ্যের পূর্ণ ও কার্যকর বাস্তবায়নকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করার লক্ষ্যে ইউএনএফসিসিসি-এর লক্ষ্য অনুসরণে আমাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।"

ইউএনএফসিসিসি হল জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন।

সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা

Link copied!