মথুরার শাহি মসজিদে জরিপের অনুমতি: ইলাহাবাদ হাইকোর্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩, ০৪:২৪ পিএম

মথুরার শাহি মসজিদে জরিপের অনুমতি: ইলাহাবাদ হাইকোর্ট

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের ইলাহাবাদ হাইকোর্ট মথুরার শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দির সংলগ্ন শাহী ঈদগাহ কমপ্লেক্সে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপের (এএসআই) অনুমোদন দিয়েছে। মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি হয়েছিল কি না, তা জানতে বারাণসীর জ্ঞানবাপীর পরে এবার মথুরার এ মসজিদ চত্বরেও সমীক্ষার নির্দেশ দিল ইলাহাবাদ হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি মায়াঙ্ক কুমারের নির্দেশ, আদালত নিযুক্ত এক কমিশনারের তদারকিতে ওই জরিপ চালানো হবে। সেই কমিশনারের নাম আদালত জানাবেন ১৮ ডিসেম্বর।

সেদিনই জরিপসংক্রান্ত যাবতীয় খুঁটিনাটি স্থির করা হবে। মসজিদ কর্তৃপক্ষ বলেছে, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা সুপ্রিম কোর্টে যাবে।

হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, ঈদগাহের ওই জমিতে কৃষ্ণের জন্মস্থানে ছিল প্রাচীন কেশবদাস মন্দির। কাশীর ‘আসল বিশ্বনাথ মন্দিরের’ মতোই মথুরার মন্দির ধ্বংস করেছিলেন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব। সেই জমির মালিকানা নিয়ে বিবাদের জেরেই জরিপের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। 

২০২২ সালের ডিসেম্বরে, মথুরা আদালত আমিন জরিপের অনুমোদন দিয়েছিল, কিন্তু উচ্চ আদালতে মুসলিম পক্ষের আপত্তির পরে আমিন জরিপ পরিচালনা করা যায়নি। এবার হাইকোর্টের আদেশের পর মুসলিম পক্ষ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

হিন্দু পক্ষের আইনজীবীদের দাবি, ওই মন্দির-মসজিদ চত্বরের মোট ১৩ দশমিক ৩৭ একর জমির মালিক মন্দিরে বিরাজমান দেবতার, যা আওরঙ্গজেবের নির্দেশে ভাঙা হয়েছিল। মন্দির ভেঙেই যে মসজিদ তৈরি হয়েছিল, তার নানা নিদর্শন মসজিদের দেয়ালে রয়েছে। যেমন প্রস্ফুটিত পদ্ম, শেষনাগ ইত্যাদি।

শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমি ও শাহি ঈদগাহ মসজিদ মোট ১৩ দশমিক ৩৭ একর জমির ওপর অবস্থিত। হিন্দু আবেদনকারীদের দাবি, ওই জমির পুরোটাই কাটরা কেশব দেবমন্দির কর্তৃপক্ষের। জরিপ ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে পরীক্ষা করলেই তা প্রমাণিত হবে।

এই একই যুক্তি দেখানো হয়েছে কাশী বিশ্বনাথ-জ্ঞানবাপি মসজিদ মামলায়ও। সেখানে আদালতের নির্দেশে জরিপ হয়েছে। সেই জরিপের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়াকে (এএসআই)। মথুরার জরিপও এই রাষ্ট্রীয় সংস্থাকেই করতে হবে।

গত বছরের ডিসেম্বরে স্থানীয় আদালত হিন্দুত্ববাদীদের সেই দাবিসংবলিত মামলাও গ্রহণ করেন। মসজিদ কর্তৃপক্ষ তা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল এলাহাবাদ হাইকোর্টে। হাইকোর্ট এখন সেই অনুমতি দেওয়ায় মসজিদ কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মসজিদ কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে বলে ঠিক হয়েছে। জ্ঞানবাপি মসজিদ কর্তৃপক্ষও সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। মুসলমানদের দাবি, অযোধ্যার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে জন্য ১৯৯১ সালে তৎকালীন নরসিংহ রাও মন্ত্রিসভা একটি আইন প্রণয়ন করেছিল।

তাতে বলা হয়েছিল, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট দেশের যেসব ধর্মস্থানের চরিত্র যে রকম ছিল, তা অপরিবর্তিত থাকবে। ব্যতিক্রম ছিল শুধু অযোধ্যায় রাম জন্মস্থান ও বাবরি মসজিদ বিতর্ক। কারণ, সেই বিবাদ তখন ছিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। অযোধ্যা মামলার রায় হিন্দুদের পক্ষে দেওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্টও ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইনের উল্লেখ করেছিলেন।

জ্ঞানবাপি মসজিদ মামলা বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্ট জেলা আদালতে ফেরত পাঠিয়েছিলেন। সে সময় সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, জরিপের অনুমতি দেওয়া ও ধর্মস্থানের চরিত্র পরিবর্তন এক নয়।

অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ আন্দোলনের সময় থেকেই আরএসএস, বিজেপি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো উগ্র দক্ষিণপন্থী সংগঠনগুলো প্রকাশ্যেই জানিয়েছিল, অযোধ্যার মতো কাশী ও মথুরাও তারা ‘মুক্ত’ করবে।

Link copied!