মৃতদের দাফনের সুযোগও মিলছে না গাজায়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

নভেম্বর ১৩, ২০২৩, ০১:৪২ এএম

মৃতদের দাফনের সুযোগও মিলছে না গাজায়

ছবি: রয়টার্স

ফিলিস্তিনের গাজার হাসপাতালগুলো ঘিরে বড় ধরনের অভিযান অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানকার প্রধান দুটি হাসপাতালও বন্ধ হয়ে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়ের। এমনকি হামলার কারণে একটি হাসপাতালে পড়ে থাকা শতাধিক মরদেহ দাফন করা যাচ্ছে না।

রবিবার ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট জানায়, হামলা ও জ্বালানি সংকটের কারণে গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম হাসপাতাল আল-কুদসের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। একই কারণে আগের দিন সেখানকার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

গত ৭ অক্টোবর হামলা শুরুর পর গাজায় জ্বালানি ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। এরই মধ্যে কয়েক দিন ধরে গাজা নগরীর হাসপাতালগুলো ঘিরে অবস্থান নেয় ইসরায়েলি ট্যাংক। হাসপাতালগুলোয় দফায় দফায় হামলা চালানো হচ্ছে।

গাজার হাসপাতালগুলোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ জাকোত বলেছেন, সেখানকার হাসপাতালগুলোয় এক ফোঁটা জ্বালানিও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, আল-শিফা হাসপাতাল নিরাপদ নয়। সেখানে মরদেহের কাছে পর্যন্ত যাওয়া যাচ্ছে না।

হামাস সরকারের উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউসেফ আবু আল-রিশ বলেন, ইসরায়েলের বিমান হামলায় আল-শিফা হাসপাতালের কার্ডিয়াক ওয়ার্ড ধ্বংস হয়ে গেছে। হামলায় দোতলা ভবনটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।

মোহাম্মদ জাকোত বলেন, ‘আল-শিফা হাসপাতাল থেকে রোগী ও বাস্তুচ্যুত লোকজনকে সরিয়ে নিতে অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর জন্য আমরা মিসরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।’

জ্বালানিসংকট; বিদ্যুৎ না থাকা; চিকিৎসা সরঞ্জাম, খাবার ও পানির অভাবে গাজার হাসপাতালগুলোয় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে ইসরায়েলি হামলায় মৃত্যুর প্রহর গুনছেন সেখানকার লোকজন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আল-শিফা হাসপাতালে পাঁচ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অপরিণত দুই নবজাতকও রয়েছে। এই হাসপাতালে শতাধিক মরদেহ পড়ে আছে। হামলার কারণে এসব মরদেহ দাফন করার মতো পরিস্থিতি নেই।

দুই দিন আগে আল-শিফা হাসপাতাল চত্বরে ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে ১৩ জন নিহত হন। গতকাল সেখান থেকে নারী-শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের একটি দল বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে গুলি চালান ইসরায়েলি সেনারা।

গাজার ইন্দোনেশিয়া হাসপাতালের মেঝেতে রেখে রোগীদের চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে। উত্তর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত বোমাবর্ষণের কারণে ভয়াবহ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

জ্বালানিসংকট ও ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজার ৩৬টি হাসপাতালের ২০টি বন্ধ হয়ে গেছে। জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা এ তথ্য দিয়েছে। অবশ্য বন্ধ হয়ে যাওয়া হাসপাতালের সংখ্যা ২১টি বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আহ্বান জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি পান্দোর। দেশটির সানডে টাইমস পত্রিকায় লেখা এক অভিমতে তিনি এ কথা বলেন।

পান্দোর লিখেছেন, ‘আমরা আইসিসির এখতিয়ারের অধীনে চারটি অপরাধের তিনটি—যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার তদন্তে গতি বাড়াতে এবং সেগুলো উদ্‌ঘাটনে আইসিসির প্রসিকিউটরের প্রতি আহ্বান জানাই।’

দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আইসিসির সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি (ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দায়) নীতির আওতায় সবচেয়ে বেশি দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’ এসব ব্যক্তির মধ্যে নেতানিয়াহু ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা থাকতে পারেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

গাজায় ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে সরব দেশগুলোর একটি দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্বিচার হামলার কড়া সমালোচনা করে আসছে দেশটি। প্রতিবাদে ইসরায়েল থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতও প্রত্যাহার করে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

Link copied!