ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫, ০৬:২১ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্র সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নিজের ‘ব্রোমান্স’ পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করবেন মোদী। ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুই নেতার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ সময় ট্রাম্পের শুল্ক ও অবৈধ অভিবাসী ইস্যু নিয়ে আলোচনা এড়ানোর চেষ্টা থাকবে।
ট্রাম্প ক্ষমতা নেওয়ার পর একাধিক বিশ্বনেতা ওভাল অফিসে তার সঙ্গে বৈঠক করতে গেছেন। এ তালিকায় সর্বশেষ নাম মোদীর। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তার সঙ্গে মোদীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল।
সফর শুরুর আগে ওয়াশিংটনের প্রতি দ্রুত শুল্কছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছেন মোদী। অন্যদিকে নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে হার্লে-ডেভিডসনের মতো বেশ উচ্চমানের মোটরসাইকেলের শুল্ক কমানো হয়েছে। ভারতের বাজারে এই স্বনামধন্য মার্কিন প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকার লড়াইয়ে বেশ বিরক্ত ছিলেন ট্রাম্প।
মাত্র কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে মার্কিন সামরিক উড়োজাহাজ ভারতের মাটিতে অবতরণ করেছে। এটা নিয়ে ভারতের রাজনীতিতে অস্বস্তি রয়েছে। যদিও ভারত সরকার অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়ে ‘কঠোর’ হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ভারতের বর্ষীয়ান কূটনীতিক বিক্রম মিশ্রি গত সপ্তাহে বলেন, মোদী আর ট্রাম্প—দুই নেতার মধ্যে ‘খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’ রয়েছে। যদিও তাদের এই সম্পর্ক দীর্ঘ প্রত্যাশিত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিতে এখন পর্যন্ত অগ্রগতি আনেনি।
গত নভেম্বরে ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতেন, তখন মোদী তার ‘ভালো বন্ধুকে’ অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। ওই সময় যেসব বিশ্বনেতা একদম শুরুতেই ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, তাদের একজন মোদী।
প্রায় তিন দশক ধরে যে দলের নেতাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে হোয়াইট হাউসে এসেছেন, সবাই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ায় অগ্রাধিকার দিয়েছেন। চীনের ক্রম উত্থানের বিপরীতে ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে ‘প্রাকৃতিক অংশীদার’ বলে মনে করেন বিশ্লেষকদের অনেকেই।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় বিদেশনীতি–সংক্রান্ত উদ্বেগ, বাণিজ্য নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছেন। এর আগে তিনি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারতকে ‘শুল্কের সবচেয়ে বড় অপব্যবহারকারী’ বলে মন্তব্য করেছেন। হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয়বার আসার পর ট্রাম্প এখন বন্ধু-শত্রুনির্বিশেষে শুল্ক আরোপের অস্ত্র ব্যবহার করছেন।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালনকারী দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের পরিচালক লিসা কার্টিজ বলেন, ট্রাম্পের রোষের বিষয়টি মোদি জানেন। তিনি প্রস্তুতি নিয়েছেন। ট্রাম্পের রোষ কমানোর চেষ্টা করছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার এরই মধ্যে ট্রাম্পকে আরেকটি শীর্ষ অগ্রাধিকারের বিষয়ে বাধ্য করেছে—সেটা অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া।
কেননা ট্রাম্পের অবৈধ অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি লাতিন আমেরিকায় মনোযোগ কেড়েছে। কিন্তু মেক্সিকো ও এল সালভেদরের পর ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত—পুরোটা পথ ভারতীয় অভিবাসীদের শিকল পরিয়ে রেখে ফেরত পাঠানো হয়। এটা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে ভারত। গত সপ্তায় ট্রাম্পের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে। দুর্বল অবস্থানের জন্য মোদিকে দুষছেন বিরোধী রাজনীতিকেরা।
তবে মোদি একটি বিষয় এড়িয়ে যাবেন। সেটা হলো মুসলিম আর অন্য সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়ে তার সরকারের রেকর্ডের ওপর মনোযোগ দেওয়া।
মোদী সরকারের এ বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন মৃদু সমালোচনা করেছিল। এখন ট্রাম্পের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি সামনে আনার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের জোট কোয়াডের একটি পূর্বনির্ধারিত শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বছরের শেষের দিকে ভারত সফর করতে পারেন।
সূত্র: প্রথম আলো।