মানব সভ্যতার সবচেয়ে ভয়াবহতম অন্ধকার দিক হলো পারস্পরিক খুনোখুনি। যা মানুষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার করেছে শুরু থেকেই। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, ব্যবসায়িক টানাপোড়েন, প্রেমঘটিত সমস্যা কিংবা আর্থিক লেনদেনকে ঘিরে মানুষ একে অন্যকে খুন করে থাকে।
সম্প্রতি সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার ঘটনা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। গণধিক্কার জানানো হচ্ছে এর সঙ্গে জড়িতদের।
কলকাতার পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে নিহত সংসদ সদস্যের মরদেহ। কিন্তু কূলকিনারা হচ্ছে না। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে তখনই আমরা জানতে চলেছি বিদেশে অবস্থানকালে খুন হওয়ার এবং দেশে না ফেরার ঘটনা সম্পর্কে। চলুন জেনে আসা যাক-
অস্ট্রিয়ার হবু রাজা ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দ
সময়টা ১৯১৪ সালের। সারাজেভোতে সস্ত্রীক অবকাশ যাপন করছিলেন অস্ট্রিয়ার হবু রাজা ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দ। হঠাৎ গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে চারপাশ। গ্যাব্রিয়েল প্রিন্সেপের বন্দুক থেকে পর পর কয়েকবার সেই গুলি বেরিয়ে এসে ফার্দিনান্দ ও তার স্ত্রী সোফিয়া হোয়াইটের বুকে বিদ্ধ হয়।
ফার্দিনান্দের মৃত্যুর ঘটনা খুবই উল্লেখযোগ্য ঘটনা। কেননা এ ঘটনায় সার্বিয়াকে দায়ী করতে থাকে অস্ট্রিয়া। কারণ হত্যাকারী ছিলেন সার্বিয়ার অধিবাসী। সারাজেভোতে ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়েই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে যায়।
১৯১৪ সালের ২৮ জুন সারাজেভোতে সস্ত্রীক অস্ট্রিয়ার যুবরাজ নিহতের পর ২৩ জুলাই সার্বিয়াকে চরমপত্র দেয় অস্ট্রিয়া। এরপর বেশি অপেক্ষা না করে ২৮ জুলাই যুদ্ধ ঘোষণা করে বসেন দেশটির রাজা। ধীরে ধীরে বিশ্বের অন্য দেশগুলোও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে থাকে।
এলি কোহেন
সিরিয়ায় গুপ্তচরবৃত্তির জন্য পরিচিত এলি কোহেন। ১৯৬১-১৯৬৫ সালের মধ্যে রাজনৈতিক নেতা ও সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে হয়েছিলেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উপদেষ্টা।
১৯৬৫ সালে সিরিয়ার কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং একই বছর তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
ধারণা করা হয়, গ্রেপ্তারের আগে কোহেনের সংগ্রহ করা গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্যগুলো ইসরায়েলকে ছয়দিনের যুদ্ধে সাফল্য এনে দেয়।
সিরিয়া থেকে ঘন ঘন সরকারি তথ্য চুরি করতে থাকায় সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশেষজ্ঞ দলের সহায়তায় হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। ১৯৬৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী কোহেনের বাসায় ঢুকে রেডিও সংকেত পাঠানো অবস্থায় গ্রেপ্তারের পর একই বছর ১৮ মে প্রকাশ্যে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
জামাল খাসোগি
সুদূর অতীত নয়। এবার বলবো আমাদের সময়ের কথা। বেশিদিন আগে নয়, ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে গিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
অনেকে মনে করেন, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য নায়ক ছিলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তার নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে অনেক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে। বিশ্লেষকরাও এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেছেন। সেই সঙ্গে বিচারের দাবিতে এখনও লড়াই করে চলেছেন সৌদি অধিকারকর্মীরা।
কিম জং-ন্যাম
২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং-উনের ভাই কিম জং-ন্যামকে হত্যা করা হয়। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে হত্যা করা হয়।
অনেকে এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা তার সৎ ভাই জিম-উনকে ইঙ্গিত করে থাকেন। উত্তর কোরিয়ার সন্দেহভাজন চারজনই হত্যার পর পরই পিয়ং ইয়ংয়ে ফিরে যান।