ইসরাইলে বাড়ছে ইহুদি-আরব সহিংসতা: গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

অক্টোবর ৭, ২০২১, ০১:৪৮ এএম

ইসরাইলে বাড়ছে ইহুদি-আরব সহিংসতা: গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা

ইসরাইল অধিকৃত ফিলিস্তিনে জনসংখ্যার বিন্যাস ও সমাজ কাঠামো চরম বৈষম্যমূলক। আর এটিই ইসরাইলের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ এবং দেশটির নাগরিকরা নিজেদেরকে প্রথম শ্রেণীর এবং ইসরাইলে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি তথা আরবদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বলে মনে করে। আর এ কারণেই প্রায়ই ইসরাইলে জাতিগত সংঘাত বাধে। ইসরাইলে ফিলিস্তিনি আরবরা সংখ্যালঘু এবং তারা ইসরাইলের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২১ শতাংশ। যারা আসল ফিলিস্তিনি আরব হলেও তারা ইসরাইলি নাগরিকত্ব নিয়ে সেখানে বসবাস করছে।

ইসরাইলে থাকা বেশিরভাগ আরব আরবি এবং হিব্রু দুই ভাষাতেই পারদর্শী এবং তারা জর্দান নদীর পশ্চিম তীর ও গাজার মুসলমানদের প্রতি অনেক সহানুভূতিশীল। এ কারণে বহু আরব ইসরাইলী নাগরিক ইসরাইলী কর্তৃপক্ষের সন্দেহের তালিকায় রয়েছে। ইসরাইলে বসবাসকারী আরবরা সবসময়ই তাদের বিরুদ্ধে সরকারী বৈষম্যের অভিযোগ করে থাকে। আবাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে বৈষম্যের অভিযোগ রয়েছে। এসব বৈষম্যের কারণেও আরব ও ইহুদিবাদীদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ হয়।  

ইসরাইলি নাগরিক অধিকার বিষয়ক সংস্থার এক জরিপে দেখা গেছে সেখানে বসবাসরত আরবদের অর্ধেক জনগোষ্ঠীই দরিদ্র শ্রেণীর। ইসরাইলের সংবাদপত্র দৈনিক হারেতজের সাংবাদিক জ্যাক খুরি এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘ইসরাইলে আরব নাগরিকদের বর্তমান প্রজন্মকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হয়। তাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় এবং রাজনৈতিক উপায়ে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের ব্যাপারে তাদের মতামতকে অগ্রাহ্য করা হয়। এসব কারণে তারা প্রায়ই প্রতিবাদ সমাবেশ করে’।

রাজনৈতিক বৈষম্য ছাড়াও ইসরাইলের ইহুদিবাদীরা সেখানকার আরবদের অতি তুচ্ছজ্ঞান করে। এটাও তাদের মধ্যকার উত্তেজনা ও রেষারেষির অন্যতম কারণ। ইসরাইলি নাগরিকদের একটা বিরাট অংশ ইসরাইলি আরবদের তাদের সমাজের জন্য হুমকি বলে মনে করে। এ কারণে তারা আরবদের তো আপন মনে করেই না বরং তাদের সঙ্গে সহিংসতায় লিপ্ত হয়। অধিকৃত ফিলিস্তিনে গত মাসে আরব ও ইহুদিদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে এবং এখনো উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে।

চলতি বছর বিভিন্ন সংঘর্ষে ইসরাইলে অন্তত ১০০ আরব নিহত হয়েছে। উত্তেজনা অব্যাহত থাকায় ইসরাইলি সমাজে আরব-ইহুদি সম্পর্কে ক্রমেই দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। ফলে ইসরাইল ভয়াবহ অভ্যন্তরীণ সংকটে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ আশঙ্কার মাত্রা এতটাই বেশি যে এর আগে ইসরাইলের সাবেক প্রেসিডেন্ট রুইন রিউলিন গৃহযুদ্ধের ব্যাপারে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেছিলেন, আমাদের অবশ্যই এ সমস্যার সমাধান করা উচিত, নইলে আমরা গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারি এবং আমাদের অস্তিত্ব আগের চেয়ে আরো বেশি বিপদের সম্মুখীন হবে।

ইসরাইলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটও আরব ও ইহুদিদের উত্তেজনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘বহু বছর এ সমস্যাকে আমরা উপেক্ষা করে এসেছি। তবে তিনি পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য আরবদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে বর্তমান মন্ত্রিসভা তাদের অধিকার রক্ষায় পদক্ষেপ নেবে। তিনি দাবি করেন, ইসরাইলের আরব নাগরিকদেরকে এটা বুঝতে হবে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের শত্রু নয় বরং তাদের সমস্যার সমাধান করতে চায়। উল্লেখ ইসরাইলে অনেক ইহুদি ও খ্রিস্টান রয়েছে, কিছু মুসলমানও রয়েছে যারা আরব হিসেবে পরিচিত।

নাফতালি বেনেট অধিকৃত এলাকায় আরব ও ইহুদিদের মধ্যে অব্যাহত সহিংসতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দাবি করেছেন, ইসরাইলের নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে বসবাসরত আরবদের শত্রু নয়।

Link copied!