জুলাই ৩১, ২০২১, ০৫:৩৬ পিএম
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২১০০ সালের মধ্যেই সারা পৃথিবীতে কমপক্ষে ৮৩ মিলিয়ন মানুষ মারা যাবে। কার্বণ নিঃসরণ হ্রাস সংক্রান্ত এক সাম্প্রতিক গবেষণায় এ ভয়াবহ তথ্য উঠে এসছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ ইন্সটিটিউটের পরিচালিত এই গবেষণায় চলতি শতাব্দীতে বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠানের কার্বন নিঃসরণের ফলে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির পরিমান মূল্যায়ন করতে একটি পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) কলম্বিয়ার ড্যানিয়েল ব্লেসারের করা ‘কার্বনের ফলে মৃত্যু’ শিরোনামের এই গবেষণায় জানা যায়- প্রতিটি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও দেশ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে কিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ন্যাচার কমিউনিকেশন জার্নালে প্রকাশিত এ গবেষণা সম্পর্কে গবেষক ড্যানিয়েল বলেছেন, ‘এই পদ্ধতির ফলে আরও সহজে জানা যাবে, কার্বণ নিঃসরণের ফলে কিভাবে মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে।’
নোবেল বিজয়ী উইলিয়াম নরডাউস ও ইয়েল ক্লাইমেট ইকনোমিস্ট ব্রেসলার জলবায়ু পরিবর্তন জনিত তাপদাহে বিশ্বের কত মানুষ মারা গেছেন তার হিসাব করেছেন। তার পরিসংখ্যানে জলোচ্ছ্বাস, ঝড়, শস্যহানি, ও তাপমাত্রা বৃদ্ধিার ফলে সৃষ্ট রোগে নিহতদের অর্ন্তভূক্ত করা হয়নি। শুধুমাত্র তাপদাহে বিশ্বে প্রায় দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে নিহত মানুষের সমান সংখ্যক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
তার পরিসংখ্যান অনুযায়ী সৌদি আরবে ০.৩৩ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ০.১৯ শতাংশ, জার্মনিতে ০.১৮ শতাংশ, চীনে ০. ১২ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ০.১১ শতাংশ মেক্সিকোতে ০.০৬ শতাংশ, ব্রজিলে ০.০৪ শতাংশ, ভারতে ০.০৩ শতাংশ, নাইজেরিয়ায় ০.০১ শতাংশ ও অন্যান্য দেশ মিলে ০.০৮ শতাংশ মানুষের গড় আয়ু কমে গেছে।
২০২০ সালে করা প্রতি চার হাজার ৪৩৪ টন কার্বণ নিঃসরণের ফলে এই শতাব্দীতে একজন মানুষ প্রাণ হারাবে। হিসাব মতে, ২১০০ সালে আমাদের গ্রহের গড় উষ্ণতা হবে ৪.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শিল্পায়ন না হলে এর পরিমান প্রায় ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম হতো।
দূষনের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৩ জনের মধ্যে একজনের গড় আয়ু হ্রাস পাচ্ছে। ব্রেসলারের মতে, সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হবে বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ ও দরিদ্র অংশে- অর্থাৎ আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায়।
এই গবেষণায় আরও জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রস্তাবিত প্রতি বছর ৫১ টন কার্বন নিঃসরণের যে যে প্রস্তাব দিয়েছে, এর ফলে পৃথিবীর ওপর কেমন প্রভাব পড়বে। এই পরিমাণে কার্বন নিঃসরিত হলে ২১০০ সালে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা হবে ৩.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর ফলে অন্তত ৭৪ মিলিয়ন মানুষের জীবন রক্ষা পাবে।
এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্বন নিঃসরণ হ্রাস সংক্রান্ত প্রস্তাবকেও কার্যকর বলা হয়েছে এই গবেষণায়। কার্বনের মূল্য বৃদ্ধির ফলে কার্বনের ব্যবহার কমানো যেতে পারে। কম কার্বন নিঃসরিত হলে স্বাভাবিকভাবেই এই দূষণ সংক্রান্ত মৃত্যু হ্রাস পাবে।
ব্রেসলারের মতে কার্বন নিঃসরনণ দূষণ কমানো কোনও একজন ব্যক্তির ব্যবহারের ওপর নির্ভর করেনা। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পণ্য উৎপাদন, বাণিজ্য ও পরিবহনের ক্ষেত্রে কম কার্বন নিঃসরিত হয় এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা। এছাড়া প্রতিটি দেশের প্রেক্ষাপটেই কার্বনের মূল্য সর্বসাধারনের নাগালের বাইরে থাকা উচিত।
সূত্র: ব্লুমবার্গ।