“ফিলিপাইনের নির্বাচনটি ছিল ভালো বনাম মন্দের লড়াই। এ নির্বাচনে প্রধান দুই প্রার্থীর একটি পক্ষ পরিবারতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র ও অপরাধের দায়মুক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। অন্য পক্ষ প্রতিনিধিত্ব করে সততা, জবাবদিহি ও গণতন্ত্রের।”
নির্বাচনের আগে প্রধান দুই প্রার্থী মার্কোস জুনিয়র ও লেনি রোব্রেডোর মধ্যকার পার্থক্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে ফিলিপাইনের বিখ্যাত ডিলিমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অ্যারিস আরুগে এভাবেই সংক্ষেপে ভোটের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছিলেন।
বহুল প্রতীক্ষিত সেই নির্বাচনটি ফিলিপাইনে হয়ে গেল। এরইমধ্যে ফলাফলও জেনে গেছে পুরো বিশ্ব। ৩৬ বছর পর আবারও সেই দুর্নীতিগ্রস্ত একটি পরিবারের হাতে ক্ষমতা ফিরে এলো। ফিলিপাইনের সাবেক একনায়ক ফার্দিনান্দ মার্কোস ও তাঁর স্ত্রী সাবেক ফার্স্ট লেডি ইমেলদা মার্কোসের ছেলে মার্কোস জুনিয়র প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হলেন। সোমবারের ভোটে মার্কোস পেয়েছেন ৬০ শতাংশ ভোট। এদিন মার্কোসের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইস প্রেসিডেন্ট লেনি রোব্রোডো পেয়েছেন ২৮ শতাংশ।
১৯৮৬ সালে ব্যাপক দুর্নীতি আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দুনিয়াজোড়া কুখ্যাতি অর্জন করা মার্কোস পরিবার 'জনগণের শক্তি' বিপ্লবের মাধ্যমে উৎখাতের পর আবারও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই দেশের শাসন ক্ষমতায় ফিরতে পারবে, এটা এক সময় ছিলো অকল্পনীয়।
মার্কোস জুনিয়রের বাবা ফার্দিনান্দ মার্কোস ১৯৬৫ সালে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট হন। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে তিনি ১৯৬৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে জয়লাভ করেন।
তিন বছর পর দেশে সামরিক আইন জারি করেন ফার্দিনান্দ মার্কোস। তিনি দাবি করেন, কমিউনিস্টদের হাত থেকে জাতিকে বাঁচানোর জন্য সামরিক আইন জারির বিকল্প ছিল না।
স্বৈরশাসক হিসেবে ফার্দিনান্দ মার্কোস ১৪ বছর দেশ শাসন করেন। তাঁর শাসনামলে তিন হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়। অন্যদের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দিতে লোকজনকে মেরে লাশ রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হতো।
ফার্দিনান্দ মার্কোসের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ ছিলেন বেনিগনো অ্যাকুইনো জুনিয়র। তিনি ১৯৮৩ সালে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। এই হত্যাকাণ্ড ফিলিপাইনের জনগণকে ক্ষুব্ধ করে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ফার্দিনান্দ মার্কোসের শাসনামলের ব্যাপক দুর্নীতি ও বাড়াবাড়ি থেকে ক্ষোভ।
ফার্দিনান্দ মার্কোসের পতনের পর একপর্যায়ে তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিজেদের ফিলিপাইনের রাজনীতিতে ফের প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন। তাঁরা ফার্দিনান্দ মার্কোসের স্বৈরশাসনামলকে ফিলিপাইনের ‘স্বর্ণযুগ’ বলে প্রচার চালাতে থাকেন। একপর্যায়ে দুতার্তের পরিবার মার্কোসদের মিত্র বনে যায়।
ফিলিপাইনের অনেকেই মার্কোস জুনিয়রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ, মার্কোস-দুতার্তে পরিবারের শাসনে ফিলিপাইনে দমনপীড়নের একটি নতুন যুগের সূচনা হতে পারে।