ফিলিপাইনে ভোট শুরু, ক্ষমতায় আসতে পারে মার্কোসপুত্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মে ৯, ২০২২, ০৩:২১ পিএম

ফিলিপাইনে ভোট শুরু, ক্ষমতায় আসতে পারে মার্কোসপুত্র

ফিলিপাইনে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। একই সঙ্গে দেশটির ১২ টি সিনেট আসন, নিম্নকক্ষের ৩০০ আসন ও স্থানীয় প্রশাসনের ১৮ হাজার আসন, সিটি মেয়র, প্রাদেশিক গভর্নর, স্থানীয় কাউন্সিলর নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে। প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সিনেটররা ছয় বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। অন্যদের মেয়াদ তিন বছর।

এবছর দেশটিতে ৬ কোটি ৫৭ লাখ ভোটার তাদের জনপ্রতিনিধি বাছাই করবেন। সব পদে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে একটি ব্যালট পেপার থেকেই বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবেন একজন ভোটার।

ফিলিপাইনে এবার প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হিসেবে লড়তে যাওয়া বেশ কয়েকজন নানা কারণেই বেশ বিতর্কিত ও আলোচিত। প্রেসিডেন্ট পদে ভোটে লড়ছেন ফার্দিনান্দ বংবং মারকোস জুনিয়র, লেনি রব্রেডো, বক্সিং তারকা ৪৩ বছর বয়সী ম্যানি প্যাকিয়াও, সিনেটর প্যানফিলো ল্যাকসন এবং চলচ্চিত্র তারকা ফ্রান্সিসকো দোমাগোসো। তবে নির্বাচনে মুল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে ফার্দিনান্দ বংবং মারকোস জুনিয়র এবং নারী প্রার্থী লেনি রব্রেডোর মধ্যে।

মার্কোস জুনিয়র

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে অন্যতম ফার্দিনান্দ বংবং মারকোস জুনিয়র। তিনি সাবেক স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মারকোসের ছেলে। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট মারকোস মার্শাল ল জারি করে দেশের আদালত, ব্যবসা ও গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে নিয়ে নেন। সেনাবাহিনী ও পুলিশ তৎকালীন ভিন্নমতাদর্শের হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর স্ত্রী ইমেলদা ও ঘনিষ্ঠজনেরা সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার কোটি ডলার লুট করেন। ১৯৮৬ সালে তাঁকে জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এর অল্পদিন পরই তাঁর মৃত্যু হয়।

১৯৮৩-১৬  এবং ১৯৮৮-২০০৭ মেয়াদে নিজ এলাকা ও ইলোকোস নর্ত প্রদেশের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩-১৬ মেয়াদে সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৬ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে লেনি রব্রোডোর কাছে হেরে যান। এবার তার রানিংমেট হিসেবে অর্থাৎ ভাইসপ্রেসিডেন্ট হিসেবে লড়ছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের মেয়ে সারা দুতার্তে।
১৯৯৫ সালে বংবং মারকোস সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কর ফাঁকির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। গতবারের নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে হেরে হেরে গেরেও এবারে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেন-বুথ ফেরত জরিপে এমনই আভাস পাওয়া গেছে।  

লেনি রব্রেডো

মার্কোস জুনিয়রের প্রতিদ্বন্দ্বী ৫৬ বছর বয়সী লেনি রবরেডো। তিনি বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট। এবারের প্রেসিডেন্ট পদে এই নারী প্রার্থী  একজন সাবেক মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী। তিনি দুতার্তে সরকারের গৃহায়ণ মন্ত্রীও ছিলেন। মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে তাঁকে বাদ দেওয়া হলে তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে মাদকবিরোধী অভিযানে দুতার্তের ‘নির্বোধ হত্যাকাণ্ডের’ সমালোচনা করার পর তাঁকে দুতার্তের মাদক জার নিয়োগ করা হয়। কিন্তু মাত্র ১৮ দিন পর বরখাস্ত করা হয় তাঁকে।


রব্রেডো সরকারি খাতের স্বচ্ছতার ওপর জোর দিচ্ছেন। তিনি জনগণের প্রতি এমন একটি সরকার গঠনের আহ্বান জানান যে সরকার মানুষের কথা ভাববে ও চিকিৎসাব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে। রব্রেডো জয়ী হলে তিনি হবেন দেশটির তৃতীয় নারী প্রেসিডেন্ট। তাঁর আগে ১৯৮৬ সালে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন কোরাজন অ্যাকুইনো আর ২০০১ সালে হয়েছিলেন গ্লোরিয়া ম্যাকাপাগাল আরোয়া।

ম্যানি প্যাকিয়াও

প্রেসিডেন্ট পদের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানি প্যাকিয়াও। ফিলিপাইনের জনপ্রিয় এই বক্সিং তারকা ক্ষমতায় এলে দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের জেলে পোরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া চীনের সঙ্গে দুতার্তের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কড়া সমালোচকও ৪৩ বছর বয়সী এই নেতা।
প্যাকিয়াও একমাত্র বক্সার হিসেবে শিরোপা জিতেছেন আটটি আলাদা ওজন শ্রেণিতে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি বক্সিং ছাড়ার ঘোষণা দেন। বর্তমানে তিনি একজন সিনেটর। এর আগে দুই দফায় ফিলিপাইন কংগ্রেসের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

১৯৯৫ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে পেশাদার বক্সিংয়ে অভিষেক হয় তাঁর। ধীরে ধীরে বিশ্বের ধনী অ্যাথলেটে পরিণত হন তিনি। প্যাকিয়াও দুতার্তের কট্টর সমর্থক ছিলেন। দুতার্তের মাদকবিরোধী যুদ্ধ ও মৃত্যুদণ্ড ফিরিয়ে আনার বিষয়টিকে তিনি সমর্থন জানান। পরবর্তেীতে  তাদের সম্পর্কে ফাঁটল ধরে।  প্যাকিয়াওয়ের  রানিংমেট জোস অ্যাতিয়েনজা। তিনি একজন কংগ্রেসম্যান ও সাবেক পরিবেশমন্ত্রী।

প্যানফিলো ল্যাকসন

৭৩ বছর বয়সী প্যানফিলো ল্যাকসন একজন সিনেটর। ২০০৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরেছিলেন। এবারের জরিপে জনপ্রিয়তায় বেশ পিছিয়ে আছেন। তিনি একজন সাবেক পুলিশপ্রধানও। একজন প্রচারকারী ও তাঁর গাড়িচালককে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত হলে ২০১০ সাল থেকে পলাতক। এক বছরের বেশি সময় পালিয়ে ছিলেন। তবে পরে সুপ্রিম কোর্ট থেকে দায়মুক্তি পান।


প্রেসিডেন্ট হতে পারলে ল্যাকসন সরকারের পদগুলো থেকে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের হটাবেন। স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। ল্যাকসনের রানিংমেট ভিসেন্তে সোট্টো। তিনি সিনেট প্রেসিডেন্ট ও সাবেক অভিনেতা।বি

ফ্রান্সিসকো ‘ইসকো মোরেনো’ দোমাগোসো

ম্যানিলার মেয়র ও সাবেক চলচ্চিত্র অভিনেতা ফ্রান্সিসকো দোমাগোসো। পর্দায় তিনি ইসকো মোরেনো নামে পরিচিত। ৪৭ বছর বয়সী দোমাগোসোর বেড়ে ওঠা বস্তিতে। পেটের ক্ষুধা মিটিয়েছেন রেস্তোরাঁর ফেলে দেওয়া খাবার খেয়ে। দরিদ্র বাবা-মাকে সাহায্য করতে পরিত্যক্ত জিনিসপত্র কুড়িয়ে বিক্রি করেছেন।

১৯৯৮ সালে তিনি সিটি কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হন। তিনবার নির্বাচিত হন ম্যানিলার ভাইস-মেয়র। তবে সিনেটর নির্বাচনে হেরে গেছেন। ২০১৯ সালে ম্যানিলার মেয়র নির্বাচিত হন দোমাগোসো।

Link copied!