মিয়ানমারে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে একদিনেই পুলিশের গুলিতে অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। বুধবার মনিয়া, ইয়াঙ্গুন, ম্যান্ডেলেসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের হামলায় এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। পুলিশের কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট আর গুলিতে আহত হয়েছেন কয়েক শ মানুষ।
নিহতদের মধ্যে দুজন কিশোর রয়েছে বলেও জানা গেছে। মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের দূত ক্রিস্টাইন শ্রানার বারগেনার বুধবারের ঘটনাকে ‘রক্তাক্ত দিন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা বন্ধের আহবান জানান। মিয়ানমারে বুধবার পুলিশি হামলায় কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
বার্তা সংস্থা মিয়ানমার নাও জানিয়েছে, ইয়াঙ্গুন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। দেশটিতে এ পর্যন্ত আটক বিক্ষোভকারীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৩০০।
১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে গণবিক্ষোভ চলছে দেশটিতে। গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি আন্দোলনকারীদের। এ পরিস্থিতিতে বিক্ষোভ দমনে দিনে দিনে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সেনা শাসকগোষ্ঠী।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এ ব্যাপারে মিয়ানমারের সামরিক পরিষদের মুখপাত্রের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও পাওয়া যায়নি তাকে। মঙ্গলবারই সু চিকে মুক্তি দিয়ে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে মিয়ানমারে শান্তি ফিরিয়ে আনতে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানায় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশি দেশগুলো।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ ও সেনা প্রহরায় মাথায় হাত দিয়ে সারি বাঁধা তরুণদের সেনাবাহিনীর ট্রাকে ওঠানো হচ্ছে। তবে ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত রেডিও ফ্রি এশিয়ায় সম্প্রচার করা একটি পৃথক ভিডিওতে দেখা গেছে, ইয়াঙ্গুনে একটি অ্যাম্বুলেন্স থেকে তিনজন স্বাস্থ্যকর্মীকে বেরিয়ে আসতে বলছে পুলিশ। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সের জানালায় গুলিও করে তারা। পরে বন্দুক আর লাঠি দিয়ে তাদের বেধড়ক পেটানো হয়, এমনকি লাথিও দেয়া হয়।
অবশ্য এমন পরিস্থিতিতেও আন্দোলন জারি রাখার ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। গণতন্ত্রপন্থি কর্মী ইস্থার জে নাও রয়টার্সকে বলেন, নিহতদের রক্ত বৃথা যেতে দেয়া হবে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে।
মঙ্গলবার দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট- আসিয়ানের একটি ভার্চুয়াল সম্মেলনে অংশ নেন সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এতে মিয়ানমার সংকট নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা হলেও তা ভেস্তে যায়। বিক্ষোভকারীদের প্রতি সহনশীল হতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানায় সব দেশ। কিন্তু বিভক্তি ছিল সু চি এবং মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টসহ আটক অন্যান্যদের মুক্তির আহ্বান জানানোর ব্যাপারে। ১০ সদস্য দেশের মধ্যে কেবল চার দেশ- ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও সিঙ্গাপুর জানায় এ আহ্বান।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর নিয়োগ করা পররাষ্ট্রমন্ত্রী উন্না মং লুইন অংশ নেন আসিয়ানের ভার্চুয়াল ওই সম্মেলনে। সেখানে তিনি সু চির সরকারের বিরুদ্ধে গত নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ সম্পর্কে প্রতিবেশি দেশগুলোকে অবহিত করেন।
সেনাবাহিনীর দাবি, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণে ভোট জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছিল সু চির সরকার। যদিও মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশনের দাবি, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছেন সু চি।জান্তা প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বললেও নির্বাচনের কোনো তারিখ ঘোষণা করেননি।
অভ্যুত্থানের পর থেকে কেবল আদালতের শুনানিতে ভিডিও কনফারেন্সেই দেখা গেছে গৃহবন্দি ৭৫ বছর বয়সী নেতা সু চিকে। তিনি সুস্থ বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। এ পর্যন্ত মোট চারটি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে সু চির বিরুদ্ধে। এর মধ্যে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণ হলে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে তার।