সুদানের ক্ষমতা ধরে রাখা ও দখলকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। সোমবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে ৭২ ঘণ্টার এই যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে বলে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম সংস্থা বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল সংঘাত শুরুর পর এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলো বিবাদমান দুই গ্রুপ। আগের দুইবারের যুদ্ধবিরতির মধ্যে হামলা, বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির খবর পাওয়া গেলেও এবার যুদ্ধবিরতি বাস্তবেই কার্যকর হয়েছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন,টানা দুইদিন আলোচনার পর সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সম্মত হয়।
কেন এই যুদ্ধবিরতি?
সুদানে বিবাদমান দুই গ্রুপের হামলা ও পাল্টা হামলায় অন্তত চার শতাধিক লোক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তিন হাজারের বেশি।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, সুদানের সহিংসতা একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে, যার প্রভাব পড়তে পারে সমগ্র অঞ্চল এবং তার বাইরেও। সুদানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর প্রতি আহ্বানও জানান। এর পরই যুদ্ধবিরতি কার্যকরের খবর সামনে আসলো।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাজধানী খার্তুমের বাসিন্দাদের ঘরের ভেতর থাকতে বলা হয়েছে। জনগণের খাদ্য ও পানির সরবরাহ কমে গেছে। ফলে ব্যাপক মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছেন সেখানকার মানুষ। সংঘাত আরও দীর্ঘস্থায়ী হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মূলত লড়াইয়ের ফলে রাজধানী খার্তুমে আটকে পড়া বেসামরিক জনগণ ও বিদেশিদের সরে যাওয়ার সুযোগ দিতেই এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। সৌদি আরব এরই মধ্যে তাদের নাগরিকদের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের কিছু মানুষকেও সুদানের বাইরে নিয়ে এসেছে। জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য তাদের কূটনীতিকদের সরিয়ে নিয়ে গেছে।
ফ্রান্স, ইটালি, স্পেনও রবিবার থেকে তাদের দূতাবাসের কর্মীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা প্রায় একশজনকে সুদান থেকে নিয়ে এসেছেন। খার্তুমে মার্কিন দূতাবাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
কেন এই বিরোধ?
২০২১ সালের ডিসেম্বরে সুদানের বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে জেনারেল বুরহান ক্ষমতাসীন হবার পর থেকেই দেশটিতে রাজনৈতিক তোলপাড় চলছে।
ক্ষমতা হাতে নিয়েই আল-বুরহান দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেন। ২০২৩ সালের জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। তবে প্রস্তাবিত বেসামরিক সরকারে কে একীভূত সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করবেন - তা নিয়ে মূলত তৈরি হয় বিবাদ।
সুদানে একটি বেসামরিক সরকার পুনপ্রতিষ্ঠা করার জন্য বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে চেষ্টা চললেও তা ব্যর্থ হয়। ওই সময় প্যারামিলিটারি বাহিনীর এক লাখ সদস্যকে সেনা বাহিনীতে একীভূত করার প্রশ্নটিও সমস্যার মূল কারণ হিসেবে দেখা দেয়।
সামরিক বাহিনীর এ দুই অংশের মধ্যে সংঘাতের এক পর্যায়ে সম্প্রতি আরএসএফ উত্তরের মেরওয়ে শহরের একটি সামরিক ঘাঁটির কাছে তাদের সেনাদের মোতায়েন করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুদানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই জেনারেলের দ্বন্দ্বের মধ্যেই গত ১৫ এপ্রিল শুরু হয় যুদ্ধ। একপক্ষে, সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুদানের সামরিক শাসক জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। অন্যদিকে, অপর গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন আল বুরহানের ডেপুটি এবং আরএসএফের অধিনায়ক জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো। অথচ এই দুই জেনারেলই সুদানের বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।