আইনগত সহায়তা পাওয়া করুণা নয়, দরিদ্র-অসহায় নাগরিকের অধিকার। এমনটাই বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল যে কোন নাগরিক আইনগত সহায়তা পাবেন, এটাই স্বাভাবিক।’
রোববার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় দুজনকে সেরা লিগ্যাল এইড অফিসার ও প্যানেল আইনজীবী হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মূল সংবিধানেই গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সামাজিক সুবিচার ও সমতার বিধানাবলীসহ বিচার প্রক্রিয়ায় ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব নাগরিকের প্রবেশাধিকারের বিধান সন্নিবেশ করে গেছেন বলেও জানান আনিসুল হক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমবার সরকার গঠন করেই ২০০০ সালে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন’ প্রণয়ন করেন শেখ হাসিনা।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আইনি সহায়তা কার্যক্রমকে আরও সফল ও বেগবান করে তুলতে হলে একে অবশ্যই জনগণের দোরগোড়ায় অর্থাৎ যারা আইনি সহায়তা পাওয়ার যোগ্য তাদের কাছে নিয়ে যেতে হবে। আর তা করতে হলে উপজেলা ও ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটিকে অধিকতর কার্যকর করতে হবে। কারাগারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। আইন সহায়তা দেওয়ার সময় পুঁথিগত আইন প্রয়োগের দৃষ্টির পাশাপাশি সামাজিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণকেও স্থান দেওয়া উচিত। পাশাপাশি আইনগত সহায়তার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ স্বঃপ্রণোদিত, দ্রুত ও কার্যকর আইনি সেবা নিশ্চিতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে অংশীদারত্ব বাড়ানোর বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা জরুরি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামলার সঠিক ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি বা এডিআর মামলাজট নিরসনের সহায়ক একটি পন্থা হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। জার্মান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা- জিআইজেডের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশের ৮৭ ভাগ মানুষ স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে আগ্রহী এবং শতকরা ৩০ ভাগ নাগরিকের প্রাথমিক দ্বন্দ্বের কারণ প্রতিবেশির সঙ্গে ছোটখাটো বিরোধ বা মারামারি যা স্থানীয়ভাবেই নিষ্পত্তিযোগ্য।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আশার কথা হলেও আমাদের স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ নিষ্পত্তির হার অতি নগণ্য। এর মূল কারণ সামাজিক পরিবর্তন,সামাজিক উন্নয়ন, মানুষের ব্যস্ততা এবং মধ্যস্থতাকারীর প্রতি আস্থার অভাব।’
এমনই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করে আমরা ২০১৫ সালে ‘আইনি পরামর্শ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’ বিধিমালা প্রণয়ন করেছি ও এতে লিগ্যাল এইড অফিসারদেরকে মধ্যস্থতা করার পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সুখবর হলো, ওই ক্ষমতা প্রয়োগ করে লিগ্যাল এইড অফিসারগণ ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার ৮৩৬টি বিরোধ নিষ্পত্তি করেছেন।’