গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া জেপি নেতা সালামের লাশ, নেপথ্যে ব্লাক মেইলিং!

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ১৯, ২০২৩, ১১:২১ পিএম

গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া জেপি নেতা সালামের লাশ, নেপথ্যে ব্লাক মেইলিং!

নিহত জেপি নেতা আব্দুস সালাম বাহাদুর। সংগৃহীত ছবি

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে গত শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে গাড়ি থেকে ফেলে যাওয়া আব্দুস সালাম বাহাদুরের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বুধবার ভোরে রাজধানী ঢাকা ও মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার গাজিন্দা এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে পুলিশ ঘটনায় জড়িত দুই নারীকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা দুজন সম্পর্কে মা-মেয়ে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে গ্রেপ্তারকৃতদের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর শ্যামলীতে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।

তিনি বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে গত ১৫ জুলাই রাত ১১টার দিকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে থানা-পুলিশ। জানা যায়, নিহত ব্যক্তির নাম সালাম বাহাদুর ওরফে আব্দুস সালাম মিয়া (৬০)। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার। তিনি জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) অর্থ সম্পাদক ছিলেন। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

পুলিশ জানায়, মামলার তদন্তে নেমে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সব সিসি ক্যামেরা অকার্যকর পাওয়া যায়। পরে পরিবারের দেওয়া তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় দুই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার নারীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যের বরাত দিয়ে ডিসি আজিমুল হক বলেন, নিহত সালামের সঙ্গে মেয়েটির রাজধানীর ধানমন্ডির একটি সুপারশপে পাঁচ-ছয় বছর আগে পরিচয় হয়। চাকরি দেওয়ার কথা বলে হওয়া পরিচয় থেকে অনৈতিক সম্পর্কে রূপ নেয়। আর এই সম্পর্কের বিভিন্ন অন্তরঙ্গ মুহূর্ত গোপনে ধারণ করে রাখেন সালাম। এরপর শুরু হয় ব্ল্যাকমেইল। সালামের এমন কাজে মেয়েটি কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে ঢাকা ছেড়ে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে নিজ বাড়িতে চলে যান তিনি। কিন্তু সালামের ব্ল্যাকমেইল চলতেই থাকে। গত ১৫ জুলাই বিকেলে সালাম মেয়েটির বাড়িতে যান। তিনি যাওয়ার আগে স্থানীয় কয়েকজনকে বিষয়টি জানায় মেয়ের পরিবার। সালাম মেয়েটির বাড়িতে যাওয়ার পরই শুরু হয় নির্যাতন। স্থানীয় কয়েকজনের সহায়তায় সালামের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য বারবার নির্যাতন করা হয়।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, নির্যাতনে সালাম গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনার পথে মৃত্যু হয়। সালামের মৃত্যুর বিষয়টি টের পেয়ে অন্যরা নেমে যায়। এরপর গ্রেপ্তার মেয়ের মা সালামের লাশ গাড়িতে করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ফেলে পালিয়ে যান। 

গ্রেপ্তার মা ও মেয়েকে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তেজগাঁও বিভাগের এই উপপুলিশ কমিশনার।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে গাড়ি থেকে ফেলে যাওয়া মরদেহটি শনাক্ত করে পুলিশ। তিনি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির (জেপি) কেন্দ্রীয় অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

৫২ বছর বয়সী সালাম বাহাদুর পেশায় একজন ঠিকাদার ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের ইন্দুরকানিতে। ঢাকায় ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সড়কে তার বাসা বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

Link copied!