জুলাই ৯, ২০২৪, ০৪:১৮ পিএম
বিশ্বে নতুন করে বেড়েছে পুরুষাঙ্গে ক্যান্সারের হার। বিশেষ করে লাতিক আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে এই সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রাজিলে গত এক দশকে এই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ৬ হাজার ৫০০ জনের বেশি পুরুষের অঙ্গচ্ছেদ করতে হয়েছে। সম্প্রতি, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিতে এ বিষয়ক বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
পুরুষাঙ্গের ক্যানসার একটি বিরল রোগ। তবে এ ঘটনা ও এতে মৃত্যুর হার বিশ্বজুড়ে বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্রাজিলে প্রতি এক লাখ পুরুষের মধ্যে ২ দশমিক ১ জনের এই রোগ হয়, যা এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ হার।
ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ২১ হাজার ব্যক্তির পুরুষাঙ্গের ক্যানসার হওয়ার খবর নথিভুক্ত হয়েছে। এতে ৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর গত এক দশকে গড়ে প্রতি দুই দিনে একজনের পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলতে হয়েছে।
ব্রাজিলের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য মারানহাওতে পুরুষাঙ্গের ক্যানসারে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। । এখানে প্রতি এক লাখ পুরুষের মধ্যে ৬ দশমিক ১ জন পুরুষাঙ্গের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। পুরুষাঙ্গের ক্যানসারের লক্ষণ শুরু হয় ঘা দিয়ে। যা কিছুতেই নিরাময় হয় না এবং ওই ঘা থেকে তীব্র গন্ধযুক্ত স্রাব বের হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে রক্তপাত হয় এবং পুরুষাঙ্গের রং পরিবর্তিত হয়ে যায়।
এই ক্যানসার প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্ষত অপসারণ, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার ভালো সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যদি চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে পুরুষাঙ্গের আংশিক বা সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ এবং আশপাশের যেমন অণ্ডকোষও কেটে ফেলার প্রয়োজন হতে পারে।
এ বিষয়ে সাও পাওলোর এসি ক্যামার্গো ক্যানসার সেন্টারের ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক থিয়াগো ক্যামেলো মুরাও বলেছেন, “আংশিক অঙ্গচ্ছেদের ক্ষেত্রে, পুরুষাঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করায় কোনও জটিলতা হয় না। তবে সম্পূর্ণ অঙ্গচ্ছেদের ক্ষেত্রে মূত্রনালির ছিদ্রটি অণ্ডকোষ ও মলদ্বারের মধ্যে পেরিনিয়ামে স্থানান্তর করা যেতে পারে।”
ব্রাজিলিয়ান সোসাইটি অব ইউরোলজির চিকিৎসক মাউরিসিও ডেনার কর্ডেইরো বলেছেন, “যৌন ভাইরাস হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাসের (এইচপিভি) ক্রমাগত সংক্রমণ এই রোগের ঝুঁকির প্রধান একটি কারণ। শারীরিক সংসর্গের সময় এইচপিভি সংক্রমণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ মুখ ও পুরুষাঙ্গের ক্যানসারের কারণও হতে পারে।”
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) ওয়েবসাইট অনুসারে, ধূমপান পুরুষাঙ্গের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। পুরুষাঙ্গ পরিষ্কার রাখতে অগ্রভাগের চামড়া যদি টানতে সমস্যা হয় তাহলে পুরুষাঙ্গের ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
তবে শুধু ব্রাজিলে পুরুষাঙ্গের ক্যানসার বাড়ছে তা নয়। সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, বিশ্বজুড়ে এই ক্যানসারে আক্রান্তের পুরুষের সংখ্যা বাড়ছে। ২০২২ সালে জেএমআইআর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড সার্ভিল্যান্স জার্নাল ৪৩টি দেশের সর্বশেষ তথ্যসংবলিত একটি বড় মাপের বিশ্লেষণের ফলাফল প্রকাশ করেছে।
এতে দেখা গেছে, ২০০৮ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে পুরুষাঙ্গের ক্যানসারে আক্রান্তের সর্বোচ্চ ঘটনা পাওয়া গেছে উগান্ডায়। ওই সময় দেশটিতে প্রতি ১ লাখ পুরুষের মধ্যে ২ দশমিক ২ জন এই ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। এর পরের অবস্থানে ছিল ব্রাজিল, প্রতি ১ লাখ পুরুষের মধ্যে ২ দশমিক ১ জন এবং থাইল্যান্ডে প্রতি ১ লাখ পুরুষের মধ্যে ১ দশমিক ৪ জন এই ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। আর সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল কুয়েত, এই দেশে প্রতি ১ লাখ পুরুষের মধ্যে শূন্য দশমিক ১ জন এই ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন।
মূলত বয়স্ক পুরুষদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এ ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে চিকিৎসক মাউরিসিও বলেন, “পুরুষাঙ্গের ক্যানসার একটি বিরল রোগ। তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য। যৌনাচারের সময় জন্মনিরোধক ব্যবহার করা এবং ফিমোসিসের ক্ষেত্রে অগ্রভাগের ত্বক অপসারণে অস্ত্রোপচার করা পুরুষাঙ্গের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।”