আগুন লাগলেই টনক নড়ে ব্যবসায়ীদের

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ৫, ২০২৩, ১১:১০ পিএম

আগুন লাগলেই টনক নড়ে ব্যবসায়ীদের

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের ভেতরে প্রবেশ পথেই দেখা যায় ময়লার স্তুপ। চারিদিকে ছড়িয়েছে দুর্গন্ধ।ভবনের উপরে উঠার পর দেখা যায় প্রতিটি সিঁড়ি ফাটল ধরা। দ্বিতীয় তলার প্রতিটি দোকানের মালামাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা। কোনো ধরনের দুর্ঘটনায় বহির্গমন পথ নেই। তার ঠিক পাশের ভবন কামার পট্টিতে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। মার্কেটের প্রতিটি গলিতে দেখা যায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মার্কেট সমিতি থেকে তাদের ইতিমধ্যেই সচেতন করেছেন এবং অগ্নিকাণ্ডের মতো কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানিও তাদের ভবনে রয়েছে। রাজধানীর ১ হাজার ৩০৫ শপিংমল ও মার্কেট আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে চিহ্নিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। 

আমলে নেয়নি মার্কেট সমিতিগুলো

রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পর ব্যবসায়ীদের আহাজারিতে মন গলেছে পুরো দেশবাসীর। কিন্তু এই মার্কেট প্রতিষ্ঠার পরপরই ফায়ার সার্ভিস এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। এই স্থানে শপিং কমপ্লেক্স করার কথাও রয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে মামলা এখনও চলমান। তবে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে উদাসীন ছিল বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। বেশ কয়েকবার ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলে জানান তাঁরা। হাজারের ওপর মার্কেট আগুনের ঝুঁকিতে থাকলেও আগুন লাগলেই টনক নড়ে সেই মার্কেটের ব্যবসায়ীদের।  

২০১৭ সালে করা এই জরিপের পর মার্কেটগুলোতে নেওয়া হয়নি বাড়তি উদ্যোগ। দায়সারাভাবে কয়েকটি মার্কেটে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র থাকলেও নেই কোনো বহির্গমন পথ।

ফায়ার সার্ভিসের জরিপে বলা হয়, রাজধানীর এক হাজার ৩০৫ শপিংমল ও মার্কেট আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ৬২২টি ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ৬৭৮টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে। কিন্তু এসব শপিংমলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মালিক বা কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফায়ার সার্ভিস ঝুঁকিপূর্ণ এসব শপিংমল বা মার্কেট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার নোটিশ দিয়ে সতর্ক করলেও তারা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে মার্কেট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ব্যবস্থা বা সতর্কমূলক বার্তা দেওয়া হয়নি। কোনো দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিক সমাধানের কোনো ব্যবস্থা থাকলেও তারা সে বিষয়ে অজানা।

শপিং মলগুলোর মধ্যে রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেট খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। একটি দোকান থেকে একাধিক দোকান বানানো হয়েছে। পাশাপাশি নেই কোনো বহির্গমন পথ। সেই সাথে কোনো অগ্নি নির্বাপনের যন্ত্রও নেই তেমন।

এদিকে কারওয়ান বাজারের ১নং ডিআইটি মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী আরদুল হাফিজ বলেন, কারওয়ান বাজারের মার্কেটগুলোর অবকাঠামো আগের তাই চাইলে সব বদলানো যায় না। তবে মার্কেট ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করা হচ্ছে কিভাবে নিরাপত্তা বাড়ানো যায়।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, আমার সকলের কাছে নোটিশ পাঠিয়েছি। এটা আসলে আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ীদের সচেতনতাও প্রয়োজন এ বিষয়ে। 

রাজধানীর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট

কাপ্তান বাজার কমপ্লেক্স ভবন-২, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স আদর্শ ইউনিট, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স গুলিম্তান ইউনিট, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মহানগর, মহানগর বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, গুলশান শপিং সেন্টার, এম প্রেজ প্লাজা, জব্বার টাওয়ার, রহমানিয়া সুপার মার্কেট, ভূইয়া ম্যানশন, গুলশান ভবন মার্কেট, গুলশান-২ ডিএনসিসি কাঁচাবাজার মার্কেট, পিংক সিটি শপিং কমপ্লেক্স, বিদিশা সুপার মার্কেট, সাবেরা টাওয়ার মার্কেট, বাইশ বর সুপার মার্কেট, ল্যান্ড মার্ক শপিং সেন্টার, বনানীর গোলাম কিবরিয়া ম্যানশন, বাংলাদেশ ইউএস মৈত্রী কমপ্লেক্স, বাড্ডার ফুজি ট্রেড সেন্টার, আবেদ আলী মার্কেট, আর এ এস প্লাজা, লুৎফুন টাওয়ার, রিজভ্যালী শপিং সেন্টার, হাকিম টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্স, বসুন্ধরার ভাই ভাই সুপার মার্কেট, হাজী আ. লতিফ ম্যানশন, আমীর ড্রিম কমপ্লেক্স, ফরাজী টোলা কাঁচা বাজার, ভাটারার আব্দুল লতিফ মার্কেট, বারিধারার নতুন বাজার দোকান মালিক সমিতি মার্কেট, মহাখালীর জননী ভবন মার্কেট, শাহীন ম্যানশন, মহাখালী প্লাজা, জেবা টাওয়ার, কারওয়ান বাজারের শাহ আলী টাওয়ার, নিক্য পেপার অ্যান্ড স্টেশনারী, মগবাজারের বাটা বাজার, বেঙ্গল টাওয়ার, আড়ং প্লাজা, বিশাল সেন্টার শপিং মল, রাজ্জাক প্লাজা শপিং কমপ্লেক্স, আহম্মেদ পরিবার মার্কেট, আলহাজ্ব শামছুদ্দিন ম্যানশন, সিরাজ ম্যানশন মার্কেট, তেজগাঁওয়ের- সেন্টার পয়েন্ট ও বে-এম্পোরিয়াল মার্কেট।

রাজধানীর উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট

‘ঝুঁকিপূর্ণ’ তালিকায় রয়েছে- উত্তরার কেসি টাওয়ার, টপটেন শপিংমল, ১৩ নম্বর ফার্নিচার মার্কেট, উত্তরা বাজার সুপার মার্কেট, আকতার ফার্নিচার, এ কে টাওয়ার, ওয়েসটেস লিমিটেড, ওরিয়ন ফুটওয়ার, মি এন্ড মম, ফ্যাশন প্যারাডাইজ, তেজগাঁওয়ের আহমেদ মার্কেট, তোহা মিয়া মার্কেট, শেখ প্লাজা, মগবাজার প্লাজা, সাউদিয়া সুপার মার্কেট, রহমান ম্যানশন, আয়শা মঞ্জিল, হাজী মোতালেব মার্কেট,  গুলশান টাওয়ার, জব্বার টাওয়ার শপিংমল, পুলিশ প্লাজা, রহমানিয়া সুপার মার্কেট, গুলশান-১ নম্বরে ডিএনসিসি মার্কেট, কাওরান বাজার ২ নম্বর সুপার মার্কেট, কাওরান বাজার কিচেন মার্কেট, কাওরান বাজার কামার পট্টি, হাসিনা মার্কেট, কাব্যকস সুপার মার্কেট, ব্র্যাক আড়ং, বনানী-বারিধারা-ডিএনসিসি বনানী সুপার মার্কেট, সাদ মুসা সিটি সেন্টার, মেহেদী মার্কেট, প্রগতি স্মরণীর হাজী জমির উদ্দিন সুপার মার্কেট, ফজিলা শপিং সেন্টার, ওয়ারীর মুক্ত বাংলা হকার্স মার্কেট, কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্স ভবন-১, খন্দকার ইলেকট্রনিক মার্কেট, শাহাবাগের আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেট, নবাবপুরের- আ. রহিম মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার, মজনু হার্ডওয়ার মার্কেট, পল্টনের  বায়তুল মোকাররম মার্কেট, পলওয়েল সুপার মার্কেট, সিটি ভবন, জাহাঙ্গীর শপিং কমপ্লেক্স, রমনা ভবন মার্কেট, মাওলানা ভাষানী স্টেডিয়াম মার্কেট, ভলিবল মার্কেট, গুলিস্তানের-এনএক্স টাওয়ার, সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, ঢাকা ট্রেড সেন্টার দক্ষিণ, ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার পাতাল মার্কেট, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মার্কেট, ডন প্লাজা, নবাব প্লাজা, পীর ইয়ামেনী মার্কেট, বংশালের- জাকের সুপার মার্কেট, রোজলীন ভিসতা শপিং কমপ্লেক্স, মিরপুরের মিরপুর টাওয়ার নার্শি মার্কেট, ডাসুরা টাওয়ার, সিটি ক্লাব মার্কেট, ইকবাল কমপ্লেক্স, চৌরঙ্গী মার্কেট, হাজী গণি মোল্লা মার্কেট, সৈকত প্লাজা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জামে মসজিদ কমপ্লেক্স।

Link copied!