পিটার ডি হাসের সাম্প্রতিক ঘটনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের শামিল: রাশিয়া

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ২৬, ২০২২, ০৪:৫৫ এএম

পিটার ডি হাসের সাম্প্রতিক ঘটনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের শামিল: রাশিয়া

রাজধানী ঢাকার শাহীনবাগে বিএনপির নিখোঁজ এক ব্যক্তির বাসায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের যাওয়ার ঘটনাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের চেষ্টা বলে মনে করে রাশিয়া। এঘটনা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কার্যকলাপের একটি ‘প্রত্যাশিত ফলাফল’ বলেও মনে করে পুতিন প্রশাসন।

গত ২২ শে ডিসেম্বরে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। রবিবার ঢাকাস্থ রাশিয়ার দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের ওই  রুশ ভাষার ব্রিফিংয়ের ইংরেজি ট্রান্সক্রিপ্ট দগণমাধ্যমে সরবরাহ করে।  রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও এটি রয়েছে।

চলতি মাসের গত ১৪ ডিসেম্বর সকালে রাজধানীর শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলামের বাসায় গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে ফেরার সময় বাসার প্রবেশদ্বরে অনাহুত একদল লোক তাঁকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করেন এবং তার গাড়ির গতিও রোধ করেন। পরে নিরাপত্তারক্ষীদের সহায়তায় তিনি নিরাপদে শাহীনবাগ ত্যাগ করে সরাসরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান মার্কিন রাষ্ট্রদূত।পরবর্তীতে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানান যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। এ ঘটনায় ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে নতুন করে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ব্রিফিংয়ে শাহীনবাগে বিরোধী দলের নেতার স্বজনদের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাতের বিরোধিতাকারীরা রাষ্ট্রদূতকে ঘিরে ধরার যে চেষ্টা করেছেন তাকে ‘প্রত্যাশিত’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন,  মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষার কথা বলে ক্রমাগত অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

"বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা" উপ-শিরোনামে প্রচারিত ব্রিফিংয়ের ইংরেজি ট্রান্সক্রিপ্টে বলা হয়, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি রাশিয়া নোটে নিয়েছে।

মূখপাত্র বলেন, সেখানে স্থানীয় একটি সংগঠনের বাধার মুখে পড়েছিলেন রাষ্ট্রদুত, যা তার জন্য নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করেছিল। ২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওই সমর্থকের পরিবারের  সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাতের বিরোধিতায় সেখানে জড়ো হয়েছিলেন ওই সংগঠনের কর্মীরা।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘রাশিয়া মনে করে ঘটনাটি আমেরিকান কূটনীতিকের তৎপরতার একটি প্রত্যাশিত ফলাফল। বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকারের প্রতি যত্নবান হওয়ার অজুহাতে ক্রমাগতভাবে এ দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি যুক্তরাষ্ট্র প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।’

বাংলাদেশে ব্রিটিশ ও জার্মান কূটনৈতিক মিশনের তার (আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের) সহকর্মীরা একই ধরনের কাজ করছেন উল্লেখ করে মারিয়া জাখারোভা ওই ব্রিফিংয়ে আরও বলেন,  ‘তারা বাংলাদেশে আগামী সংসদ নির্বাচন স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে প্রকাশ্যে সুপারিশ করছেন।’

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের মৌলিক নীতিগুলো লঙ্ঘন করে এমন পদক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য।

মারিয়া জাখারোভা বলেন, যদি কেউ প্রশ্ন করতে চান- ‘কূটনীতিক, দায়মুক্তি, দূতাবাস, নিরাপত্তা’ শব্দগুলো কেমন হবে? আমরা সব সময় আন্তর্জাতিক আইন এবং কূটনৈতিক ও কনস্যুলার সম্পর্কিত ভিয়েনা কনভেনশন অনুসারে এই বিষয়গুলো দেখার আহ্বান জানাই। এগুলোই মৌলিক নীতি।
মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্য দেশগুলোকে শুধু তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই যত্নবান এবং মন্তব্য না করে বরং  আন্তর্জাতিক সংস্থা, দেশগুলো এবং তাদের প্রতিনিধিরা যখন তাদের দূতাবাসের নিরাপত্তা ও কনস্যুলার সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে, তখন তাদের সমর্থন করার জন্য আমরা আহ্বান জানাই।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, অন্য দূতাবাস, কনস্যুলেট জেনারেল, সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে যখন সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে বা তারা হুমকি পাচ্ছেন তখন বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চায় না বা এ কথা শুনতে চায় না। তারা এ বিষয়ে কোনো খেয়ালই করে না। সর্বোপরি, তারা নীরব থাকে এবং সবচেয়ে খারাপভাবে বলতে গেলে, এর মাধ্যমে তারা হামলাকে ন্যায্যতা বা বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের রাজনীতি, নির্বাচন, মানবাধিকার পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানিসহ পশ্চিমা বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো বারাবরই সরব। বাংলাদেশের ২০১৪ এবং ১৮ সালের নির্বাচনকে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করে তার পূনরাবৃত্তি রোধে ওইসব দেশের ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার  সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে বিভিন্ন রকম সুপারিশ তুলে ধরছেন। সরকার তাদের এই কর্মকাণ্ডে প্রায়শই বিরক্তি প্রকাশ করলেও তারা ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ি আচারণ করছে না। এরই ধারাবাহিকতায় পশ্চিমাদের এমন কর্মকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে 'হস্তক্ষেপ' আখ্য দিয়ে গত গত সপ্তাহে স্বপ্রনোদিত বিবৃতি দিয়েছে ঢাকাস্থ রাশিয়ান দূতাবাস। পরবর্তীতে পুতিন সরকারের প্রতিনিধি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ঘটনায় প্রেস ব্রিফিং করে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাঁড়লেন।

Link copied!