‘মৈত্রী পাইপলাইন’ ঢাকা-দিল্লির বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার মাইলফলক: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ১৯, ২০২৩, ০৪:২১ এএম

‘মৈত্রী পাইপলাইন’ ঢাকা-দিল্লির বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার মাইলফলক: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ ও ভারতের প্রথম আন্তঃসীমান্ত জ্বালানি তেলের পাইপলাইন ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন উদ্বোধনকে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে পারস্পরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার একটি মাইলফলক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং দিল্লি থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বোতাম টিপে ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন উদ্বোধন করার পর দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা এ মন্তব্য করেন।

উদ্বোধনের পর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি, পারস্পরিক সুবিধার জন্য বাংলাদেশ-ভারতের কানেকটিভিটি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন দুই নেতা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে বলেন, “এটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। ভারত বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। আমাদের দুই দেশের এই বন্ধুত্ব অটুট থাকুক সেটাই আমি চাই।”

বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদাকে কার্যকর করতে চাই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের লক্ষ্য, ভারতের সাথে এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে দুই দেশের জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণে একসাথে কাজ করার জন্য  ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা আরও উন্নত করতে চাই।”

এসময় বাংলাদেশের সরকারপ্রধান আরও বলেন, “আমরা চাই আমাদের দেশের এই উন্নয়ন আরও বেগান হোক হোক। পাশাপাশি অঅমাদের দেশের মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর এবং সিলেট, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে উন্নত করেছি। এগুলো ভারতের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিচ্ছি যাতে এই বন্দরগুলো ব্যবহারে ভারতের কোনও অসুবিধা না হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজ এবং দুই দেশের জনগণের লাভের জন্য আমরা এটা করছি।”  

বাংলাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা চাই ভারতের বিনিয়োগকারীরা সেখানে এসে আরও বিনিয়োগ করুক। বাংলাদেশ ও ভারত-দুই দেশের মানুষই তাতে লাভবান হবে।”

এসময় আগামী দিনেও ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মতো আরও সফলতা বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে উদযাপন করবে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একইসঙ্গে কাজ করবে বলে আশবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র ও শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্যে জানা যায়,  ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন দুই দেশের মধ্যে প্রথম আন্তঃসীমান্ত জ্বালানি তেলের পাইপলাইনটি নির্মাণের আনুমানিক খরচ ৩৭৭ কোটি রুপি। বাংলাদেশ অংশে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৮৫ কোটি রুপি। ভারত সরকার থেকে এ আর্থিক সহায়তা বহন করা হয়েছে। পাইপলাইনটি ভারতের অভ্যন্তরে ৫ কিলোমিটার ও বাংলাদেশ অংশে ১২৫ কিলোমিটার বিস্তৃত।

পাইপলাইনটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সাতটি জেলায় প্রাথমিকভাবে উচ্চ গতির ডিজেল সরবরাহ করবে। ১৩১ দশমিক ৫ কি.মি দীর্ঘ ও ১০ ইঞ্চি ব্যাসের ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের (আইবিএফপিএল) মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় বছরে ১ মিলিয়ন টন তেল পাওয়া যাবে। যেখানে পরবর্তীকালে ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল পরিবহন করা সম্ভব হবে।

প্রসঙ্গত, পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে ডিজেল আমদানির জন্য ২০১৭ সালে চুক্তি সই হয়। এটি পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মেঘনা পেট্রোলিয়াম ডিপো পর্যন্ত বিস্তৃত।

২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি এই পাইপলাইনটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। ২০২০ সালের মার্চে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৫ বছর মেয়াদি এ প্রকল্প ভারতের লুমানিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) এবং বাংলাদেশের মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

Link copied!