এক প্রত্যন্ত গ্রামের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করতেন পুরুষরা। সামাজিক কুপ্রথার নাম করে অকথ্য নির্যাতন, নাবালিকাদের বিয়ে, একাধিক পুরুষ কর্তৃক ধর্ষণ- এসব ছিল গ্রামটির নিত্যকার ঘটনা।
স্বামী ইচ্ছা হলে স্ত্রীকে হত্যাও করতে পারতেন। নারীদের পাশে দাঁড়ানোর ছিলেন না কেউ। বরং স্বামীকে সমর্থন করতেন অন্য পুরুষরা। নারীদের জন্য এমনই নিষ্ঠুর ছিল সাম্বুরু।
গ্রামটিতে নারীদের অবস্থা কতটা করুণ তা বুঝাতে একটা উদাহরণ দেয়া যাক।
এক সময় একসঙ্গে গ্রামটির প্রায় দেড় হাজার নারী ধর্ষিত হয়েছিলেন। স্বামীদেরও তাঁরা পাশে পাননি। উল্টো তাঁদের বাড়িছাড়া করেছিলেন স্বামীরা।
সে গ্রামের নাম সাম্বুরু। কেনিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামটিতে বাস করেন আদিবাসী সাম্বুরু গোষ্ঠী। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের আদিবাসী নারীদের মতো সমাজের পিছিয়ে পড়া সারিতে ছিলেন সাম্বুরু নারীরা। তাঁদের গণ্য করা হত দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে।
নির্যাতিত হতে হতে দেয়ালে পিঠ থেকে গিয়েছিল সাম্বুরুর নারীদের।
কথায় আছে, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ঘুরে দাঁড়াতে হয়। ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন সাম্বুরুর নারীরা। গড়ে তুলেছিলেন নিজেদের এক গ্রাম।
নির্যাতনের শিকার এক সাম্বুরু নারী রেবেকা ললোসলির হাত ধরে ১৯৯০ সালে নির্যাতিত- বিতাড়িত কিছু নারীদের নিয়ে গড়ে ওঠে এক পুরুষমুক্ত গ্রাম।
নাম তার উমোজা। এর অর্থ নারীদের নিজস্ব গ্রাম। যেখানে পুরুষের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এখন উমোজা গ্রামে আশ্রয় নেন সাম্বুরুর সব নির্যাতিত নারীরা। এই গ্রামে মর্যাদার সাথে মাথা উঁচু করে বাঁচেন তাঁরা।
নির্যাতিত অনেক অন্তঃসত্ত্বাও এখানে ঠাঁই নেন। সন্তানের জন্ম দেন এখানেই। যদি পুত্র সন্তান হয় তাহলে ১৮ বছর হলেই উমোজা ছাড়তে হয় সন্তানকে।
যদিও সাম্বুরুর পুরুষশাসিত সমাজ মেনে নিতে পারেননি উমোজার অস্তিত্ব। অনেকবারই হামলা-হুমকির শিকার হতে হয়েছে রেবেকাদের। সেসব সহ্য করেই জীবন যাপন করছেন তারা।
তাদের এই সংগ্রামের কথা যখন বিশ্ব জানতে পারলো তখন পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের স্থান হয়ে উঠল উমোজা। স্বনির্ভর হয়ে উঠতে লাগলেন উমোজার নারীরা।
মজার ব্যাপার হলো তাদের এই এগিয়ে যাওয়া সহ্য করতে না পেরে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পুরুষ গ্রাম গড়তে চেয়েছিলেন সাম্বুরুর পুরুষরা। কিন্তু সফল হয়নি তাদের এই চেষ্টা।
একাধিকবার তাঁদের গ্রামে আক্রমণ করে ঘর-বাড়ি ভেঙে ফেলে সাম্বুরুর পুরুষরা। মামলা করে উমোজার নারীদের জমি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করে তারা।
স্বনির্ভর হওয়ার জন্য উমোজার নারীদের অর্থসাহায্যের পাশাপাশি উপার্জনের জন্য নারীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় এখানে। পর্যটনের পাশাপাশি কুটির শিল্প এবং চাষবাস করেও তাঁরা উপার্জন করেন এখন।
নারীদের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি আরও বহু সামাজিক কাজে নিযুক্ত তাঁরা। অনাথ শিশুদের বড় করেন উমোজার নারীরা।
নির্যাতনের শিকার নারীদের সুন্দর জীবন দিতে এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উমোজার নারীরা।