‘ভিক্টিম ব্লেমিং’ ধারা বাতিলের দাবিতে 'শেকল ভাঙ্গার পদযাত্রা'

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ১১, ২০২১, ০২:৩২ পিএম

‘ভিক্টিম ব্লেমিং’ ধারা বাতিলের দাবিতে 'শেকল ভাঙ্গার পদযাত্রা'

রাজধানীতে যৌন নিপীড়ন এবং ধর্ষণবান্ধব সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নারীদের উদ্যোগে  প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।

বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) রাত ১১.৫৯ মিনিটে গৃহ-কর্মস্থল-গণপরিবহনে নারীর জন্যে নিরাপদ বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে 'শেকল ভাঙ্গার পদযাত্রা' নামক ওই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে।

রাজধানীর শাহবাগ থেকে নারীদের এই পদযাত্রা শুরু হয়ে শেষ হবে মানিক মিয়া এভিনিউতে সংসদ ভবনে যেয়ে। পদযাত্রার পর প্রতিবাদী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে পদযাত্রার সংগঠকরা৷ একইসাথে সাক্ষ্য আইন(১৮৭২) এর ১৫৫(৪) ধারা বাতিলের দাবীতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হবে বলে তারা জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সন্ধ্যা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রতে (টিএসসি) ফেস্টুন লেখা, আঁকা, রঙ করা, মশাল তৈরির কাজ শুরু হবে। পদযাত্রার রুট হিসেবে শাহবাগ-সিটি কলেজ-কলাবাগান-মানিক মিয়া এভিনিউ-সংসদ ভবন নির্ধারণ করা হয়েছে। সংহতি জানিয়ে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার শিক্ষার্থী-শিক্ষক-শিল্পীদের। এই পদযাত্রায় উপস্থিত থাকবেন রেহনুমা আহমেদ, সায়দিয়া গুলরুখ, আনহা এফ. খান, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, আশনা হাবিব ভাবনা, আশফাক নিপুণ এবং কৃষ্ণকলিসহ আরও অনেকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশে ধর্ষণ হলো একমাত্র অপরাধ যেখানে অপরাধ ঘটার পর অপরাধের বিচারের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় অপরাধের শিকার নারীর চলন-বলন ও পোশাকের দিকে। প্রতিটা ধর্ষণের অভিযোগের পর সমাজের আচরণ দেখে মনে হয়, যেন এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার বৈষম্যমূলক মানদণ্ড অনুযায়ী নারীর চলন-বলন ঠিক না থাকলে তার সাথে অন্যায় হওয়াটাই স্বাভাবিক।

সাক্ষ্য আইন (১৮৭২) এর ১৫৫(৪) ধারা অনুসারে, কোনো ব্যক্তি যখন বলাৎকার বা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারিতে সোপর্দ হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে "অভিযোগকারিণী" সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা।

আইনের এই ধারায় উল্লিখিত শব্দগুলো থেকেই খুবই পরিষ্কার যে, শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনা একজন নারীর চরিত্র কেমন—সেটি দিয়ে তার অভিযোগের ন্যায্যতা বিচার করা হয়।

পদযাত্রা ও প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজকরা জানান, রাষ্ট্র খুবই স্পষ্ট এবং সহজ উপায়ে একটা জঘন্য অপরাধকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করতেই অস্বীকার করছে! নিপীড়নের শিকার হওয়ার পর এই আইন বলবৎ থাকার কারণে নারীকে কাঠগড়ায় দেখাতে হয় তার চারিত্রিক সনদপত্র, উত্তর দিতে হয় আসামীপক্ষের আইনজীবীর জঘন্য সব প্রশ্নের! আমাদের "বিজ্ঞ" আদালত এসকল নোংরা নিপীড়নের চর্চা চুপ করে শুনে যান!

জানতে চাইলে 'শেকল ভাঙ্গার পদযাত্রা'র সংগঠক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী প্রাপ্তী তাপসী দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে শুধুমাত্র লৈঙ্গিক পরিচয় 'নারী' হওয়ার কারণে যে জুলুম-অত্যাচার-বৈষম্য সহ্য করতে হয় প্রতিনিয়ত, নিপীড়নের বিচার চাইতে গেলে যেখানে ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট খুলে দেখাতে বলে এই রাষ্ট্র– তার বিরুদ্ধে আমাদের এই প্রতিবাদ। অনতিবিলম্বে স্বাক্ষ্য আইন(১৮৭২) এর ১৫৫(৪) ধারাটি বাতিল করার সুস্পষ্ট দাবী নিয়ে নারীদের এই পদযাত্রা।’

তিনি আরও বলেন, আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই ধরণের অবমাননাকর এবং বিদ্বেষমূলক চর্চা আমরা দেখতে পাই যেগুলোর মধ্য দিয়ে নারীর প্রতি নিপীড়নের বৈধতা দান করা হয়।’

Link copied!