এত এত নক্ষত্র জ্বলছে, তবুও রাতের আকাশ আলো ঝলমলে নয় কেন?

ফারজানা আক্তার

ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪, ০২:০৯ এএম

এত এত নক্ষত্র জ্বলছে, তবুও রাতের আকাশ আলো ঝলমলে নয় কেন?

সংগৃহীত ছবি

কখনো কি ভেবেছেন রাতের আকাশ কেন কালো হয়? বিজ্ঞানীরা সবসময় উদ্ভট জিনিস চিন্তা করতে ভালোবাসেন। আর এসব উদ্ভট চিন্তা থেকেই তাঁরা প্রকৃতির রহস্যভেদ করতে চান।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে একজন জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী, নাম তাঁর হেনরিক ভিলহেম ওলবার্স, একটি উদ্ভট প্রশ্ন করেছিলেন, রাতের আকাশ কালো কেন? সাধারণ মানুষ বলতে পারে রাতের আকাশে তো সূর্য থাকে না তাই রাতের আকাশ কালো হবে এটাই তো স্বাভাবিক কিন্তু আসলে বিষয়টা যতটা সহজ মনে হচ্ছে আসলে তা। এর পেছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। ওলবার্স বললেন, রাতে সূর্য থাকেনা, কিন্তু অসংখ্য নক্ষত্র তো থাকে।

এরা একেকটি সূর্যের মতোই গনগনে আগুনের পিণ্ড, আলোর উৎস। যদিও তাদের অবস্থান অনেক দূরে, কিন্তু কোটি কোটি নক্ষত্রের সম্মিলিত আলোর ছটায় রাতের আকাশ তো আলোকিত হয়ে উঠার কথা, কিন্তু সেটি হচ্ছে না কেন? জ্যোতির্বিজ্ঞানে এই প্রশ্নটিকে বলা হয়, ওলবার্স প্যারাডক্স। বিজ্ঞানীরা গত দুইশ বছরে নানা ভাবে এই প্রশ্নটির উত্তর দেবার চেষ্টা করেছেন।

ডাচ চিত্রকর ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ-এর বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘দ্য স্টারি নাইট’-এ রাতের আকাশ বেশ উজ্জ্বল দেখালেও বাস্তব ঠিক তার উল্টো। রাতের আকাশ প্রকৃতপক্ষে কালো। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথে আছে প্রায় ১০০ বিলিয়ন নক্ষত্র। আর গোটা মহাবিশ্বে গ্যালাক্সি আছে আনুমানিক ১২৫ বিলিয়ন। এত এত নক্ষত্র জ্বলছে, তবুও রাতের আকাশ আলো ঝলমলে নয়।

প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে জন্ম হয়েছিল মহাবিশ্বের। বিস্ফোরণের পর ফুলেফেঁপে ওঠে মহাবিশ্ব। মহাবিশ্বের এই ফুলে ওঠা, অর্থাৎ সম্প্রসারিত হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে আজও। ফলে মহাবিশ্বের গ্যালাক্সিগুলো তাদের সব নক্ষত্র নিয়ে বিপুল গতিতে একে অন্যের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ফলে গ্যালাক্সিগুলো আমাদের পৃথিবী থেকেও দূরে সরে যাচ্ছে। গ্যালাক্সি তথা নক্ষত্রপুঞ্জের এই দূরে সরে যাওয়ার কারণেই রাতের আকাশ অন্ধকার দেখায় বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। পদার্থবিদ্যার যে সূত্রটি দিয়ে এর ব্যাখ্যা করা হয়, তাকে বলা হয় ডপলার এফেক্ট বা ডপলার ক্রিয়া।

পানির তরঙ্গ, শব্দ তরঙ্গ বা আলোর তরঙ্গ—এ সবই ডপলার এফেক্টের নিয়ম মেনে চলে। যখন কোনো তরঙ্গ আমাদের দিকে ছুটে আসে বা আমরা কোনো তরঙ্গের দিকে ছুটে যাই, তখন সে তরঙ্গের দৈর্ঘ্য কমে যায়। তরঙ্গের দৈর্ঘ্য কমলে বেড়ে যায় কম্পন।

Link copied!