আশির দশক থেকে বর্তমান প্রজন্মের তরুণ সমাজের মন খারাপের রাতের সঙ্গী হিসেবে যে গানেরা একের পর এক বাজতে থাকে, সে তালিকায় রূপালি গিটারের মূর্ছনা কিন্তু থাকেই।
সে তারা ভরা রাতে, এখন অনেক রাত, মেয়ে তুমি কি দুঃখ চেনো না, আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি, চলো বদলে যাই-এমন কত গান যে আজও তরুণ প্রজন্মের মন শান্ত করে দেয় তা কে না জানে। আজও বিয়েবাড়ির আয়োজনে বেজে ওঠে - এক আকাশের তারা তুই একা গুণিস নে, আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসি, অনন্ত প্রেম, উড়াল দেব আকাশে।
বলছিলাম গিটার লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চুর কথা। ১৪ বছর বয়সে বন্ধুর থেকে নিয়ে ছোট্ট দুটি হাতেই গিটারে টুংটাং বাজাতে শুরু করেছিলেন তিনি। আমেরিকান শিল্পী জিমি হেন্ড্রিক্স ও জো স্যাট্রিয়ানীর গিটার বাজানো দেখে অনুপ্রাণিত হতেন সবসময়। তারপর কলেজ বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তোলেন ব্যান্ড গোল্ডেন বয়েজ। বিয়ের অনুষ্ঠান, ক্লাব, হোটেলের মঞ্চগুলোতে চলত গান গাওয়া।
হারানো বিকেলের গল্প গানটি দিয়ে ১৯৭৮ সালে 'ফিলিংস' ব্যান্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যান্ড জগতে যাত্রা শুরু করেন আইয়ুব বাচ্চু। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বছর ব্যান্ড সোলস-এর সাথে তার পথ চলা। সোলস ছাড়ার পর ১৯৯১ সালের ৫ই এপ্রিল জন্ম নেয় লিটল রিভার ব্যান্ড যার নাম পাল্টে পরে হয় লাভ রানস ব্লাইন্ড মানে এলআরবি।
১৯৯৯ সালে মালেক আফসারীর পরিচালিত “লাল বাদশা’ সিনেমার “অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে” গানে কনক চাঁপার সাথে গলা মিলিয়ে প্লেব্যাকে অভিষেক হয় এবির।
হাসতে দেখো গাইতে দেখো-গানের গায়ক মনে অনেক অভিমান পুষে রেখেও জীবনের শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছেন এই দেশের ব্যান্ডসঙ্গীত জগতের জন্য। গিটার জাদুকরকে সম্মান জানিয়ে তার নিজ শহর চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড়ে তৈরি হয়েছে রূপালি গিটার ভাস্কর্য।
গায়ক, লিড-গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার ও প্লেব্যাক শিল্পী- সব মিলিয়ে গানের জগতের এই মায়েস্ত্রোর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। সুখের এই পৃথিবীতে সুখের অভিনয় ছেড়ে ২০১৮ সালের এই দিনে মাত্র ৫৬ বছর বয়সে রূপালী গিটার ফেলে আইয়ুব বাচ্চু হয়ে যান দূর আকাশের তারা। এবিকে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।