ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩, ০২:১৪ এএম
অনেক ঘটনা রটনার পর শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধান কোচের দায়িত্ব নিয়ে সোমবার ঢাকায় পা রাখলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম এই কোচের ফেরা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে অন্যতম আলোচিত একটি ঘটনা। ২০১৭ সালে হাথুরু বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচের পদ থেকে নাটকীয়ভাবে সরে দাঁড়ান।
ওই সময় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাথে দূরত্বের কারণে চাকরি ছেড়েছিলেন হাথুরুসিংহে। আবারও একই বোর্ডের অধীনে একই চাকরিতে ফিরলেন হাথুরু। বলা যায়, আবারও হাথুরু যুগে ফিরল বাংলাদেশ ক্রিকেট।
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে: দল বাছাইয়ে স্বাধীনতা পছন্দ করেন কড়াকড়িভাবে। ছবি: সংগৃহীত
মাঝে শ্রীলঙ্কার জাতীয় দলের কোচের দায়িত্বে ছিলেন হাথুরুসিংহে। তবে সেখানেও কোচ হিসেবে তাঁর বিদায় খুব একটা সুখকর ছিল না। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন হাথুরুসিংহের আগের অধ্যায় ভুলে সামনের দিকে তাকাতে চাইছেন।
কিন্তু হাথুরুসিংহের এই ফেরা কীভাবে দেখছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা? ঘুরেফিরে আসছে এই প্রশ্নটি।
দলের পুরনোদের সাথে দূরত্ব ছিল হাথুরুসিংহের। এবার হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে ফিরছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের আগে। তিনি বাংলাদেশ ছাড়ার আগে দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের সাথে তার দূরত্ব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ছিল তখন।
যদিও সাকিব আল হাসান বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে বলেছেন, হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের সেরা কোচ। তবে ওই সময়েই মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা হাথুরুসিংহের আপত্তিতেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ছেড়েছিলেন ২০১৭ সালে।
হাথুরু তখন মুশফিকুর রহিমকেও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রাখতে চাননি। প্রায় একই সময়ে অর্থাৎ ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে দ্বিতীয় টেস্টে বাদ দিয়েছিলেন একাদশ থেকে।
রিয়াদ এখন আর টেস্ট ক্রিকেটে নেই, মুশফিকও সম্প্রতি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায় নিয়েছেন। তবে, সেই ঘটনার পাঁচ বছর পরেও মাশরাফি ঘরোয়া পর্যায়ে টি-টোয়েন্টি খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মাশরাফি ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় চরিত্রগুলোর একজন ছিলেন, তখনও তিনি বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন।
তাই মাশরাফির হঠাৎ টি-টোয়েন্টি ছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে একটা ধাক্কার মতো ছিল। সাকিব আল হাসানের শৃঙ্খলাজনিত নানা আচরণে হাথুরুসিংহে নাখোশও ছিলেন।
জানুয়ারিতে হাথুরুসিংহের বাংলাদেশের কোচ হিসেবে ফেরা নিশ্চিত হওয়ার পর মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ড্রেসিংরুম হাথুরুসিংহেকে কীভাবে নেয়, এটা এখন দেখার বিষয়।
চন্ডিকা হাথুরুসিংহের অধীনে খেলতে মুখিয়ে আছেন তাসকিন আহমেদও। ছবি: সংগৃহীত
অন্যদিকে, সাকিব আল হাসানের শৃঙ্খলাজনিত নানা আচরণে হাথুরুসিংহে নাখোশ ছিলেন এবং এসব নিয়ে খোলামেলাই কথা বলেছেন তিনি।
তবে, দলের শীর্ষ খেলোয়াড়দের সাথে দূরত্ব থাকলেও হাথুরুসিংহের নিজস্বতার জন্যেও তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমী এবং আলোচিত এক কোচ। এর মধ্যে হাথুরুসিংহের কোচিং মেথডের বড় ব্যাপার ছিল তিনি দল নির্বাচনে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকতেন।
বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ যেমনটা বলেছেন, এবারও হেড কোচ এবং অধিনায়কই নির্বাচন করবেন একাদশ।
অর্থাৎ এবারও হাথুরুসিংহের মেথডে কোনও পরিবর্তন যে আসবে না, তা প্রায় নিশ্চিৎ। যদি এই মেথডে পরিবর্তন না আসে, তবে দলে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। তবে সেটা এই বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে নাকি পরে হবে সেটাই হবে দেখার বিষয়।
মুখিয়ে আছেন মিরাজ ও তাসকিন
বাংলাদেশের হয়ে হাথুরুসিংহের নতুন ইনিংস নিয়ে ক্রিকেটারদের কেউ কেউ 'সতর্ক' প্রতিক্রিয়া দেখালেও, নতুন কোচের অধীনে খেলতে তরুণ ক্রিকেটাররা বেশ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন এখন।
বাংলাদেশের বর্তমান ড্রেসিংরুমের গুরুত্বপূর্ণ দুই সদস্য মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাসকিন আহমেদ আপাতত হাথুরুসিংহেকে স্বাগত জানাতে মুখিয়ে আছেন।
মিরাজ বলেছেন, নতুন কোচ এলে মানিয়ে তাঁর সাথে নিতেই একটা বড় সময় চলে যায়, কিন্তু হাথুরুসিংহের সাথে এটা হবে না। কারণ সবাইকে নিয়ে কাজ করেছেন তিনি (হাথুরুসিংহে)। কাকে দিয়ে কী করানো যায়, এটা তিনি ভালো করেই জানেন।
তাসকিন জানিয়েছেন, দলের সবার সাথেই হাথুরুসিংহের এরই মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে। তাসকিন জানিয়েছেন, দলের সবার সাথেই হাথুরুসিংহের এরই মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান দলের তরুণ খেলোয়াড়দের অনেকেরই অভিষেক হয়েছে হাথুরুসিংহের সময়ে।
মিরাজের অভিষেকও হয় চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সময়ে। ছবি: সংগৃহীত
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৬ সালে মেহেদী হাসান মিরাজের অভিষেক হয়েছিল হাথুরুসিংহের অধীনেই। এখনকার দলের মুস্তাফিজুর রহমান, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্তরও অভিষেক হয় হাথুরুসিংহের সময়ে।
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে তাসকিন আহমেদ বলেছেন, হাথুরুসিংহের আগমনে তিনি রোমাঞ্চিত। তাসকিনের মতে, এবারের যাত্রাটা ভালো হবে, এর আগে যখন তিনি কোচ ছিলেন তখন ইয়াং ছিলাম, আগের তুলনায় এখন আমরা আরও পরিপক্ক। দলের অবস্থাও ভালো।
তাসকিন জানিয়েছেন, দলের সবার সাথেই হাথুরুসিংহের এরই মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে। তিনি আসার পর আবারও বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন।
হাথুরুসিংহে যখন কোচ ছিলেন তখন ঘরের মাটিতে টেস্ট ফরম্যাটে স্পিনারদের দেওয়া হতো বাড়তি গুরুত্ব। তাসকিন মনে করেন, এখন পেসারদের মান বেড়েছে। এটা একটা পজিটিভ দিক। পেসারদেরও এবার বেশি বেশি খেলাবেন তিনি, আশাবাদ তাসকিনের।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাম্প্রতিক সময়ের সেরা পারফর্মার মেহেদী হাসান মিরাজও মনে করেন, হাথুরুসিংহের ফেরা সবার জন্যই ভালো হবে।
বিবিসি