স্পাইক প্রোটিনে ৩০ বারের বেশি নিজের রূপ বদলে ফেলায় করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অনেকের আশঙ্কা,করোনার নতুন এই ধরনটিতে টিকা কার্যকর হবে না। টিকার কার্যকারিতাকেও ফাঁকি দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করে থাকেতে পারে।ডব্লিউএইচও গ্রিক বর্ণমালা অনুযায়ী নতুন এই বি.১.১.৫২৯ ভ্যারিয়েন্টের নাম দিয়েছে ওমিক্রন।
ওমিক্রনের উৎপত্তি?
দক্ষিণ আফ্রিকায় বি.১.১.৫২৯ ভ্যারিয়েন্ট প্রথম শনাক্ত হওয়ার খবর মিলেছে। গত ২৪ নভেম্বর প্রথমবার এই ভ্যারিয়েন্টটি দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। দেশটিতে গত ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত সংগৃহীত নমুনায় এই ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া যায়।
যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, গত ৯ নভেম্বর বতসোয়ানায় সংগৃহীত একটি নমুনাতেও বি.১.১.৫২৯ ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া গেছে। বিশ্বজুড়ে তুলকালাম ফেলে দেওয়া এই ভ্যারিয়েন্ট দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও ইতোমধ্যে বতসোয়ানা, বেলজিয়াম, হংকং এবং ইসরায়েলে শনাক্ত হয়েছে।
নতুন শনাক্ত হওয়া রূপান্তরিত ধরনটির স্পাইক প্রোটিন মূল করোনাভাইরাসের চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন। ফলে মূল করোনাভাইরাস থেকে এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা অনেক বেশি। এমন শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই।
কতটা বিপজ্জনক ওমিক্রন
ডব্লিউএইচওর তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের যে কয়েকটি ধরন শনাক্ত হয়েছে; তার মধ্যে ওমিক্রনের ‘রি-ইনফেকশন’ বা পুনরায় সংক্রমণের ক্ষমতা বেশি। অর্থাৎ—কেউ একবার এই ধরনে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠলেও ফের একই ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউশন অব অ্যালার্জি ও ইনফেশন ডিজিসের পরিচালক ড. এন্টোনি ফাউচি বলেছেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট বি.১.১.৫২৯ এর রূপ বদলে ফেলার গতি-প্রকৃতি অত্যন্ত অস্বাভাবিক। এই ভ্যারিয়েন্টটি ইতোমধ্যে ৩০ বারের বেশি মিউটেশন ঘটিয়েছে তার স্পাইক প্রোটিনে।
এর আগে, বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রকোপ ডেকে আনা করোনার আরেক সংক্রামক ধরন ডেল্টার মিউটেশনের তুলনায় নতুন শনাক্ত ওমিক্রনের রূপ বদলে ফেলার এই হার প্রায় দ্বিগুণ।
টিকায় কাজ হবে
নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখনই নিরেট কোনো উপসংহারে পৌঁছাতে বারণ করেছেন। তবে নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে তুলকালাম শুরু হওয়ায় বিদ্যমান টিকা এটিকে ঠেকাতে পারবে কি-না সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ওমিক্রনের ব্যাপারে বিশদ জানতে এবং বিদ্যমান টিকায় কাজ হবে কি-না; তা পরিষ্কার হতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
বিজ্ঞানীদের হাতে এখন পর্যন্ত যে তথ্য এসেছে তা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওমিক্রনের রূপ বেশিবার বদল হয়েছে মূলত স্পাইক প্রোটিনে। স্পাইক প্রোটিনের জিনগত কাঠামোতে বদল হয়েছে ৩০ বার। জিনের প্রোটিনের অ্যামাইনো অ্যাসিডের স্থানে এই বদল ঘটেছে। এছাড়া ফিউরিন ক্লিভেজ সাইটেও মিউটেশন ঘটেছে ৩ বার। এই তিনবারে রূপ বদল না ঘটলেও চরিত্র বদলে ফেলেছে ওমিক্রন।
উদ্বেগ কেন?
করোনা ভাইরাসের টিকা মূলত করোনার জেনেটিক উপাদান এমআরএনএর ওপর ভিত্তি করে আবার কোনোটি স্পাইক প্রোটিনের গঠনকে ধরে। এছাড়া নিষ্ক্রিয় করোনাভাইরাসকে ব্যবহার করেও ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে। চিন্তার কারণ এখানেই। যেহেতু এই ভাইরাসটি রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড ভাইরাস বা আরএনএ ভাইরাস তাই বিপদটা বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টটি শনাক্ত হয়েছে যাদের শরীরে তাদের বেশিরভাগই টিকা নেওয়া ছিলেন।
আন্তর্জাতিক মহামারিবিদ ও জীবাণু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কয়েকবার রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার কারণে ওমিক্রন ধরনটি টিকাপ্রতিরোধী হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ করোনা টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করা ব্যক্তিরাও এই ধরনটির দ্বারা সহজেই আক্রান্ত হতে পারেন।