করোনায় পুরুষের চেয়ে নারীর মৃত্যু কম যে কারণে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ৬, ২০২১, ১২:৪৭ এএম

করোনায় পুরুষের চেয়ে নারীর মৃত্যু কম যে কারণে

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে করোনাভাইরাসে পুরুষের তুলনায় নারীদের মৃত্যু হার কম। তবে মহামারীর কারণে প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা সীমিত হয়ে পড়ায় কোভিডের চেয়ে মাতৃত্বকালীন জটিলতায় সামনে বেশিসংখ্যক নারীর মৃত্যু হতে পারে।

বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। সম্প্রতি করোনায় পুরুষ ও নারীদের তুলনামূলক মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে আফ্রিকা মহাদেশে গবেষণা জরিপ পরিচালনা করে জাতিসংঘ। এরপরই এ বিষয়ে তারা তথ্য তুলে ধরে।  

প্রতিবেদনে বলা হয়, গিনি, মরিসাস এবং উগান্ডাসহ আফ্রিকার ২৮টি দেশের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গড়ে নারীদের করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার পুরুষের চেয়ে তুলনামূলক কম। দেশগুলোতে সার্বিকভাবে নারীদের আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ শতাংশ। তবে নাইজারে এ পার্থক্যটা আরেকটু বেশি, সংখ্যাটা ৩১ শতাংশ।’

ডব্লিউএইচও’র আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক মাতসিহিদো মোতেই।

ডব্লিউএইচও’র আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক মাতসিহিদো মোতেই এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বেশিরভাগ দেশে করোনায় মৃত্যুর হার পুরুষের চেয়ে নারীদের কম। তবে করোনা মহামারী স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে যে ব্যবধান তৈরি করেছে, এতে নারীরা পর্যাপ্ত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি ফেব্রুয়ারির মধ্যে অপর এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় মোট ১০টি দেশে মাতৃ মৃত্যুহার বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি মাতৃমৃত্যু বেড়েছে কোমোরোস, মালি, সেনেগাল এবং দক্ষিণ আফ্রিকায়।

ইউরোপ ও এশিয়াতেও একই দৃশ্য:

সম্প্রতি করোনায় মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ইউরোপের আরেক গবেষণায় একই রকম তথ্য উঠে আসে। সেখানে দেখা যায়, ইউরোপর অঞ্চলের করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশ ইতালি ও স্পেনে নারীর তুলনায় পুরুষের মৃত্যুর হার অনেক বেশি। ইতালিতে কোভিড–১৯ এ মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৭১ শতাংশ পুরুষ এবং ২৯ শতাংশ নারী। স্পেনে মৃতদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৫ শতাংশ নারী।

করোনা আক্রান্ত রোগীদের সামলাতে হাসপাতালে ব্যস্ত চিকিৎসকরা।

এছাড়া করোনায় মৃতদের মধ্যে ফ্রান্সে পুরুষের সংখ্যা ৫৮ শতাংশ ও নারীর সংখ্যা ৪২ শতাংশ, ইরানে ৫৯ শতাংশ পুরুষ ও ৪১ শতাংশ নারী মারা গেছে।

করোনাভাইরাসের উৎসস্থল চীনেও ৬৪ শতাংশ পুরুষ ও ৩৬ শতাংশ নারী মারা গেছেন। পর্তুগালেও চীনের মতো একই সংখ্যক নারী–পুরুষের মৃত্যুহারের তথ্য পাওয়া গেছে। জামার্নিতে মৃত্যুর হারে ৬৬ শতাংশ পুরুষ ও নারী ৩৪ শতাংশ।

পুরুষদের তুলনায় নারীদের মৃত্যু কেন কম?

তবে নারীর চেয়ে পুরুষের মৃত্যুর হার বেশি কেন— এমন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, নারীদের সুস্থ, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে তারা পুরুষের চেয়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে শক্ত লড়াই করতে পারছে। তবে জিনগত আচরণ ও হরমোন পার্থক্যও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ব্যাপারে পরিবেশগত বিষয়ও থাকতে পারে।

স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতায় পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি সচেতন।

মার্কিন চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের একটি অংশ এর নেপথ্য কারণ হিসেবে তুলে ধরছেন লিঙ্গভেদে শারীরিক গঠন এবং হরমোনের প্রতিক্রিয়াকে। গবেষকদের বক্তব্য হচ্ছে, নারীশরীরে টাইপ-১ ইন্টারফেরন প্রোটিনের উৎপাদন বেশি হয়। এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ ইমিউনিটি সিস্টেমের অস্বাভাবিক দুর্বলতা, যাকে সাইটোকিন স্ট্রম বলা হয়, তা প্রতিহত করে। ফলে করোনাভাইরাস নারী শরীরের ক্ষতি কম করতে পারে।

কোভিড-১৯ এর স্বাস্থ্যবিধি, যেমন ফেস মাস্ক পরা, হাত পরিষ্কার রাখা ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন। পুরুষদের তুলনায় তারা এ সব নিয়ম পালন করে থাকেন বেশি কঠোরতার সঙ্গে। সেই দিকটিও যে গবেষকরা গুরুত্বের সঙ্গে ব্যাখ্যা করেছেন।

 

Link copied!