লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে করোনা সংক্রমণের হার অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে। প্রতিদিন অন্তত এক লক্ষ নতুন রোগী শনাক্তের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুহার। টিকা দেওয়ার ধীর গতি, হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের স্বল্পতা ও অক্সিজেনের অভাবে এরই মধ্যে দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।
মঙ্গলবার সাও পাওলোর রিপোর্টার প্যাট্রিশিয়া ক্যাম্পোস মেলো সিএনবিসির “দ্য নিউজ উইথ শেপার্ড স্মিথ’ কে বলেন ‘ দেশের মানুষেরা অক্সিজেনের অভাবে ভুগছে। বলা যায় অক্সিজেনের অভাবে দমবন্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে। আক্রান্তদের জন্য কোনও ওষুধ নেই, আইসিইউতে বিছানা নেই। সঠিক পরিকল্পনার প্রচন্ড অভাবেই দেশের এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’ প্যাট্রিশিয়া আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে।’
মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) একদিনে ৮৪,৪৯৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত ও ৩,৭৮০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সরকারী তথ্যমতে বিগত ১৩ মাসের মধ্যে মহামারিতে মঙ্গলবার সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ মারা গেছেন। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, মৃত ও আক্রান্তের দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে ব্রাজিল।
করোনার ভ্যাকসিনের অপ্রাপ্যতা ও ভ্যাকসিনেশান কার্যক্রমে ধীর গতি নিয়ে জনগণের মনে আশঙ্কা ও হতাশা বাড়ছে। বেশ কয়েকটি রাজ্যে ভ্যাকসিনের অভাবে ভ্যাকসিনেশান স্থগিত এমনকি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে থেমে নেই সংক্রমণ, প্রতিদিন দ্বিগুণ-তিনগুণ হারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।
ব্রাজিলের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিওরোসাইন্টিস্ট ও গবেষক মিগুয়েল নিকোলেলিস বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ভ্যাকনিনেশানের গতি কমপক্ষে ১০ গুণ বৃদ্ধি করা জরুরি।’
মহামারির পরিস্থিতি এত নাজুক হলেও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টিকা পাওয়ার কথা যাদের তাদের মধ্যে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ নাগরিক টিকা নিতে পেরেছেন। সে হিসাবে এ পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার মাত্র ২.১ শতাংশ ব্রাজিলিয়ান ভ্যাকসিনের দুই ডোজ নিতে পেরেছেন।
ডাক্তার ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা হিসাবে জানাচ্ছে, করোনার এই নতুন ঢেউয়ে বয়স্কদের পাশাপাশি তরুণেরাও মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। এর আগে বিশ্ব ব্যাপী ধারণা ছিলো করোনা বয়স্কদের জন্য বেশি প্রাণঘাতি হলেও তরুণ ও অল্পবয়স্করা তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিতে। কিন্তু বর্তমানে ব্রাজিলে এই ধারণা আর কাজে আসছেনা।
অন্যদিকে, মহামারি মোকাবেলায় প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারোর ভূমিকা প্রথম থেকেই নিন্দার মুখে পড়েছিল। সামাজিক দুরত্ব, মাস্ক পড়া, লকাডাউন ইত্যাদির কোনোটাই মানতে রাজি ছিলেন না তিনি। করোনার ভ্যাকসিনে করোনা দূর হওয়ার পরিবর্তে মানুষের শরীরে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও বিতর্কিত মন্তব্য করেন বোলসোনারো।
শুরু থেকে করোনা কে গুরুত্ব না দেওয়া এং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় মহামারি এরকম লাগাম ছাড়া হয়ে গেছে বলে নাগরিকেরা মনে করছেন। দেশের সাধারণ জনগণের পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তারাও বোলসোনারোর এহেন কর্মকান্ডে অসন্তুষ্ট। প্রেসিডেন্টের ওপর ক্ষুধ্ব হয়ে দেশটির তিন বাহিনীর প্রধানেরা পদত্যাগ করেছেন। ফলে চাপের মুখে পড়ে গেছেন প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো।
সূত্র: এনবিসি নিউজ, রিও টাইমস।