করোনা মোকাবিলায় সচেতনার বিকল্প নেই: এবিএম আব্দুল্লাহ

সাইফুর রহমান শিশির

জুন ২৬, ২০২১, ০৯:১৭ পিএম

করোনা মোকাবিলায় সচেতনার বিকল্প নেই: এবিএম আব্দুল্লাহ

কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা সংক্রমণ উর্ধমুখী। এ অবস্থায় আবারও কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারাদেশে ওই লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। তবে এবারের লকডাউনের সাথে ‘কঠোর’ শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনা জটিলতায়। এর আগে চলতি বছর ১৯ এপ্রিল সর্বোচ্চ ১১২ জনের প্রাণহানির কথা জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ।

এর আগে কয়েক দফা লকডাউন ঘোষণা দিয়েছে সরকার। গত বছরের শেষ দিক থেকে কয়েক মাস করোনার প্রকোপ কিছুটা কমেছিল।

তবে এ বছরের মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় ৫ এপ্রিল থেকে আবার বিধিনিষেধের আওতায় আসে দেশ।

প্রথমে সাত দিনের জন্য গণপরিবহন চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। পরে তা আরও দুই দিন বাড়ানো হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আরও কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হয়। পরে তা আরও বাড়িয়ে ১৫ জুলাই পর্যন্ত করা হয়েছে।

মূলত ঈদুল ফিতরের পরপরই ব্যাপকভাবে বেড়ে যায় সংক্রমণ। ঈদের ছুটিতে শহর থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯। এর পাশাপাশি সীমান্ত থেকে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও ছড়িয়েছে কোভিডের বিস্তার।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সচেতনার কোন বিকল্প নেই। কেননা গ্রামের মানুষ করেনাভাইরাসের অস্তিত্বেই বিশ্বাসী নয়। তাই, তাদের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন প্রবণতাই নেই।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং একুশে পদকজয়ী চিকিৎসক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় গ্রামের পাড়া মহল্লায় সচেতনতা কমিটি গঠন করতে হবে।

গণটিকাদান কর্মসূচির গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘লকডাউন আরোপ করা হলেও এটি কোন দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়। সবাইকে টিকার আওতায় আনতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেন চলা। এবং এক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরির কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।’

দ্য রিপোর্টের সাথে আলাপকালে দেশের খ্যাতিমান এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। গ্রামে গ্রামে, মহল্লায় মহল্লায় সচেতনতা কমিটি করতে হবে। কমিটিতে জনপ্রতিনিধিদের রাখতে হবে। এমপি, চেয়ারম্যান, মেম্বার, মসজিদের ইমাম এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে।’

এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, অর্থনৈতিক প্রভাব বিবেচনা করে লকডাউন বেশিদিন দেওয়া যায় না। তাই জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যারা মানে না, তাদেরকে মানতে বাধ্য করতে হবে।  

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজে লাগানোর কথা উল্লেখ করে এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, “মাস্ক পরতে হবে। হাত ধোয়ার চর্চা চালু রাখতে হবে। এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এটা করতেই হবে। এটা না করলে সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না।’

বর্ষীয়ান এই চিকিৎসক বলেন, ‘ডেল্টা ভেরিয়্যান্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যে কোন বয়সের মানুষ এতে সংক্রমিত হতে পারে। অনেক সময় এ ভাইরাসের লক্ষণও বোঝা যায় না। হঠাৎ করে শরীর খারাপ হয়ে যায়। আক্রান্তদের দ্রুত অক্সিজেন মাত্রা নেমে যায়। দ্রুত হাসপাতালে নিতে না পারলে অনেক সময় রোগী মারাও যায়।’

ডেল্টা ধরন বাতাসের মাধ্যমে ছড়ানোর কারণে ঝুঁকির পরিমাণ আরও বেশি বলে মনে করেন তিনি। কেন না গ্রামে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা ও সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় প্রাণহানিও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক এই চেয়ারম্যান ও ডিন বলেন, ‘সংক্রমণ আরও বাড়তে থাকলে চিকিৎসায় মারাত্মক সংকট দেখা দিতে পারে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অধিকাংশ হাসপাতালে আইসিইউ বেড নেই, অক্সিজেন শর্টেজ। ফলে ঝুঁকি রয়ে গেছে।’

Link copied!