করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশে নতুন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ফের বেড়েই চলছে। প্রতি চারজনের নমুনা পরীক্ষাতে একজন করে কোভিড রোগী শনাক্ত হচ্ছে। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬ হাজার ৮৩০ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে, যা একদিনে শনাক্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড। একই সময়ে মারা গেছে আরও ৫০ জন, যা সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা ভাইরাসের ঊর্ধ্বগতি যেন থামছেই না। প্রতিদিনই নতুন রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় বাড়ছে। এটি বড় উদ্বেগের কারণ। দেশে করোনা সংক্রমণ আগের মতো ভয়াবহ অবস্থায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।
দেশে করোনার নতুন ধরনের সংক্রমিত রোগী থাকায় ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় এই সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর আগে দেশে করোনা সংক্রমণের পিকটাইমে অর্থাৎ জুন-জুলাই মাসে সংক্রমণ ছিল যথাক্রমে ২১ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং ২২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আর বর্তমানে সংক্রমণের শনাক্তের হার ২৩ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯ হাজার ৩৩৯টি নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে একদিনে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৮৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষা বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। দেশে এখন পর্যন্ত ৪৭ লাখ ২৮ হাজার ১১৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ৬ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। মোট নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২১ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বর্তমানে দেশের ৩১টি জেলা করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মৌলভীবাজার জেলা। এর পরই মুন্সীগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট, নরসিংদী, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, বরিশাল, রাজশাহী, বগুড়া, নড়াইল, গাজীপুর, ফরিদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর, মাদারীপুর, নওগাঁ, রংপুর, কিশোরগঞ্জ, নাটোর, টাঙ্গাইল ও কক্সবাজার।
এদিকে, দেশে প্রতিনিয়ত কমছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, টিকাদান কার্যক্রম শুরুর প্রথম দুই সপ্তাহে প্রতিদিন আড়াই লাখের বেশি মানুষ টিকা নিলেও এখন তা অর্ধ লাখে নেমে এসেছে।
সবশেষ বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) সারা দেশে ৪২ হাজার ৩৬০ জন মানুষ টিকা নিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ৩০ মার্চ টিকা নিয়েছেন ৫৬ হাজার ৪৩১ জন, ২৯ মার্চ নিয়েছেন ৫৬ হাজার ৪৩১ জন, ২৮ মার্চ ৫৮ হাজার ৪২৪ জন, ২৭ মার্চ ৬৫ হাজার ৩৬৮ জন। শুক্রবার (২৬ মার্চ) সরকারি ছুটির দিন থাকায় টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ ছিল। তার আগের দিন বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) ৭০ হাজার ৪০৭ জন এবং বুধবার (২৪ মার্চ) ৭৮ হাজার ৮১৭ জন টিকা নেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণের কারণে কোভিড শনাক্তকরণ পরীক্ষায় পজিটিভ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। চলমান কোভিড-১৯ টিকার দুটি ডোজ গ্রহণের ন্যূনতম দুই সপ্তাহ পর থেকে সর্বোচ্চ প্রতিরোধ সক্ষমতা তৈরি হয়। এ সময়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। তাই টিকাগ্রহণের আগে এবং পরে মাস্ক ব্যবহারসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’