ঢাকা দক্ষিণের রাজস্বের পালে মোবাইল টাওয়ারের হাওয়া

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ২২, ২০২২, ০৭:৩৬ এএম

ঢাকা দক্ষিণের রাজস্বের পালে মোবাইল টাওয়ারের হাওয়া

রাজধানীতে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানি টাওয়ার বসিয়ে এতদিন  ব্যবসা করলেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) দেয়নি। এতে প্রতি বছর মোটা অংকের রাজস্ব হারায় সিটি করপোরেশন। বিষয়টি জানতে পেরে  ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পরই মোবাইল কোম্পানির কাছ থেকে ভ্যাট আদায় শুরু করে। যার কারণে বিগত বছরগুলোর চেয়ে ডিএসসিসির রাজস্ব বেড়েছে।

ডিএসসিসি’র একটি সূত্র জানায়, মোবাইল টাওয়ার থেকে ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে মোটা অংকের বকেয়া ভ্যাট পেয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি। ডিএসসিসি মেয়র  ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

গত ৪ আগস্ট  ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডিএসসিসি’র ৬ হাজার ৭৪১ কোটি ২৮ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণাকালে ডিএসসিসি মেয়র  জানান,  ২০২০-২১ অর্থবছরে মোবাইল টাওয়ার ব্যবহার বাবদ মুঠোফোন কোম্পানীগুলো থেকে ১৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণ করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতে ১১ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা অতিক্রম করে ১৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।

ডিএসসিসির এক প্রতিবেদন দেখা গেছে, মোবাইল টাওয়ার থেকে ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে মোটা অংকের বকেয়া ভ্যাট পেয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি। এতে গ্রামীফফোন লিমিটেড বকেয়া দুই বছরে ভ্যাট দেয় ৪ কোটি ৩৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫৮ টাকা, গ্রামীণফোন লিমিটেড (মনোপল) এক বছরের ভ্যাট দেয় ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন লিমিটেড বকেয়াসহ দুই বছরে ভ্যাট ২ কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার ৫৮৩ টাকা দিয়েছে। আর রবি আজিয়াটা ৫৬ লাখ ১৬ হাজার ৬৭৮ টাকা, ইডটকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড ১৫ কোটি ৬২ লাখ ২৪ হাজার ৬৭৭ টাকা, ইডকো (মনোপল) ৪৫ হাজার ৭৫ হাজার টাকা, সামিট টাওয়ারস লিমিটেড ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৮২ টাকা, কীর্তনখোলা টাওয়ার বাংলাদেশ লিমিটেড ৩০ হাজার টাকা, এবি হাইটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেড ১ লাখ ১১ হাজার ৩৮৭ টাকা। তবে টেলিটক সরকারি সংস্থা হওয়ায় টাওয়ারের জন্য সিটি করপোরেশন কোনো ভ্যাট নেয়নি।

ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীর মালিক বা কর্তৃত্ব সিটি করপোরেশন। সেই সিটি করপোরেশনের বুকের ওপর টাওয়ার বসিয়ে দিব্বি ব্যবসা করছিল মোবাইল কোম্পানিগুলো। ভ্যাট না দিয়ে এমন ব্যবসা চালানো অসম্ভব। তাই শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়রের দায়িত্ব নিয়ে সর্বপ্রথম এসব কোম্পানির কাছে ভ্যাট নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন।

জানা গেছে, আদর্শ কর তফসিল ২০১৬ সালের ১০ (৪.২৯৭) ধারা অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকা কোনো কোম্পানি মোবাইল টাওয়ার বসাতে বাড়ির মালিকের সঙ্গে যে চুক্তি হয়, সেই চুক্তির ছয় ভাগের এক ভাগ অর্থ সিটি করপোরেশনকে দিতে হয়। এখন টেলিটক ছাড়া সবগুলো মোবাইল কোম্পানি সিটি করপোরেশনকে ভ্যাট দিচ্ছে।

ডিএসসিসি এলাকায় মোবাইল টাওয়ার বসালে কোনো ভ্যাট দেওয়া হয়নি। এ কারণে ২০১৩-১৪ অর্থবছর হতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বকেয়া পরিশোধ করতে হয়।

ডিএসসিসি জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের দ্যা রিপোর্ট ডট লাইকে বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় ব্যবসা করতে হলে ট্রেডলাইসেন্স লাগে। ব্যবসা বাবদ ভ্যাট পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু মোবাইল কোম্পানিগুলো সিটিতে টাওয়ার বসালেও দীর্ঘদিন ভ্যাট দেয়নি। কোম্পানিগুলোর কাছে ভ্যাট নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। পরবর্তীতে মেয়রের নির্দেশে ভ্যাট নেওয়া শুরু হয়।

এ বিষয়ে জানতে ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা (উপ-সচিব) আরিফুল হক এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

Link copied!