ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী ফজর থেকে মাগরিব পর্যন্ত না খেয়ে রোজা পালন করতে হয়। অর্থাৎ সূর্যোদয়ের আগে সাহ্রি খেতে হবে এবং তারপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনো ধরনের খাবার বা পানীয় গ্রহণ করা যাবে না।
ভাবুন তো আপনি যেখানে আছেন সেখানে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ১৬ বার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে রোজার সময় কীভাবে ইফতারের সময় নির্ধারণ করবেন আপনি!
এই বিভ্রান্তিকর অবস্থাতেই আছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) নভোচারী সুলতান আলনিয়াদি। তিনি এখন আছেন মহাকাশে। থাকবেন ছয় মাস।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আলনিয়াদিকে বহনকারী মহাকাশ ল্যাবরেটরি ঘণ্টায় ২৭ হাজার ৬০০ কিলোমিটার গতিতে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। সেজন্যই প্রতিদিন ১৬ বার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখছেন তিনি।
গত ৩ মার্চ সুলতান আলনিয়াদি মহাকাশে যাত্রা করেন। তিনি যাওয়ার পর থেকেই প্রশ্নটি উঠতে শুরু করে কীভাবে রোজা রাখবেন তিনি। যদিও এ প্রশ্নের উত্তর গত জানুয়ারিতেই এক সংবাদ সম্মেলনে দিয়েছিলেন আলনিয়াদি।
ওই সংবাদ সম্মেলনে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, “যখন মহাকাশ স্টেশনে থাকবেন, তখন আপনি কীভাবে রোজা রাখবেন?”
জবাবে মুসলমান এই নভোচারী বলেন, “মহাকাশে অবস্থান করার সময় আমি একজন ভ্রমণকারী হিসেবে বিবেচিত হব, তখন রোজা রাখা আমার জন্য বাধ্যতামূলক হবে না। এমনকি আপনি যদি ভালো বোধ না করেন, তাহলেও আপনার জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়।”
আলনিয়াদি বলেন, “যেহেতু মহাকাশের যেকোনো কিছু মিশনকে ধ্বংস করতে পারে বা ক্রুদের স্বাস্থ্যকে বিপন্ন করতে পারে, তাই ডিহাইড্রেশন ও অপুষ্টি এড়ানোর জন্য আমাদের পর্যাপ্ত খাবার খাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”
পরবর্তীতে ফেব্রুয়ারিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সুলতান আলনিয়াদি বলেছিলেন, “আমি চাইলে গ্রিনিচ টাইম বা আর্থ টাইম অনুযায়ী রোজা রাখতে পারি, যা অফিশিয়াল স্পেস টাইম হিসেবে বিবেচিত হয়।”
আলনিয়াদি আগেও বলেছেন, “তিনি যদি রোজা রাখার সুযোগ পান, তাহলে তিনি তা পালন করবেন। রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। আমি অপেক্ষা করব এবং দেখব, রোজা রাখা যায় কি-না।”
তবে মহাশূন্যে ধর্মপালনের ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ নিয়ম নেই। শুরু থেকেই মহাকাশচারীরা মহাশূন্যে নানাভাবে ধর্মীয় আচার পালন করে আসছেন।
১৯৬৮ সালে নাসার অ্যাপোলো ৮ মিশনে নভোচারীরা চাঁদে যাওয়ার পথে বাইবেলের প্রথম বই জেনেসিস পাঠ করেন।
পরবর্তীতে ২০০৭ সালে মালয়েশিয়ান নভোচারী শেখ মুজাফর শুকুর প্রথম ধর্মপালনকারী (প্র্যাকটিসিং) মুসলিম হিসেবে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে অবস্থান করেন। ইসলামিক ন্যাশনাল ফতোয়া কাউন্সিল অভ মালয়েশিয়া তার ও ভবিষ্যৎ মুসলিম নভোচারীদের জন্য বিশেষ নির্দেশিকা প্রদান করে।
মুজাফর রমজানে মহাশূন্যে পাড়ি দিলেও কাউন্সিল বলে যে, পৃথিবীতে ফেরার আগপর্যন্ত তিনি রোজা না রাখলেও চলবে, অথবা তিনি চাইলে যে জায়গা থেকে যাত্রা শুরু করেছেন সেখানকার টাইম জোন অনুসারে রোজা রাখতে পারবেন।
এছাড়া কাউন্সিলের পক্ষ মুজাফরকে বলা হয়, নামাজ পড়ার সময় তাকে হাঁটু গেড়ে না বসলেও চলবে (শূন্য মাধ্যাকর্ষণে এ কাজটি অত্যন্ত কঠিন)।
ফতোয়া কাউন্সিলের নির্দেশিকায় কিবলামুখী হয়ে অর্থাৎ মক্কার দিকে ফিরে নামাজ পড়ার বাধ্যবাধকতাও শিথিল করা হয় মুজাফরের জন্য। বলা হয়, এটি তাঁর পক্ষে যতটুকু সম্ভব, ততটুকু করলেই হবে।