রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের ফলে ডলারের বাজারে প্রভাব পড়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার সরবারহ করলেও টাকার মান অস্বাভাবিক হারে কমে যাবার আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা।
আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৫৪ শতাংশ। বিপরীতে সাত মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। একই সাথে আশানুরুপ হারে রফতানি আয় বাড়ছে না। এর প্রভাব পড়েছে ডলারের বাজারে। এ চাপ সামাল দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে সাত মাসে (আগস্ট-২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) বাজারে বিক্রি করেছে প্রায় ৩২৮ কোটি মার্কিন ডলার, যার স্থানীয় মূল্য ২৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা হিসেবে)। বাজার বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, সামনে ডলার বাজারের সঙ্কট আরো বেড়ে যাবে। কারণ, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলার অতিক্রম করছে। আগে থেকেই রেমিট্যান্সপ্রবাহ কম, এর ওপর চলমান যুদ্ধের কারণে আমদানি ব্যয় আরো বেড়ে যাবে। একই সাথে ডলারের আন্তঃপ্রবাহ আরো কমে যেতে পারে। সবমিলেই সামনে ডলারের বাজারের চাপ আরো বেড়ে যাবে বলে তারা মনে করছেন।
ডলারের চাহিদার সাথে প্রবাহ বাড়েনি
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাজারে ডলার বিক্রি করতে হয়নি। বাজারচাহিদার তুলনায় তখন বাড়তি ডলার ছিল। কিন্তু আগস্ট থেকে চাহিদা বাড়তে থাকে। কিন্তু যে হারে চাহিদা বাড়তে থাকে, সেই হারে ডলারের আন্তঃপ্রবাহ বাড়েনি। এর অন্যতম অন্তরায় ছিল বছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে যাওয়া। প্রতি মাসেই রেমিট্যান্সপ্রবাহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমে যায়। এভাবে জুলাই-জানুয়ারিতে (সাত মাসে) রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি আগের অর্থবছরের চেয়ে ঋণাত্মক হয় প্রায় ২০ শতাংশ। আগের অর্থবছরের সাত মাসে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৪ শতাংশ, সেখানে চলতি অর্থবছরে তা না বেড়ে বরং কমে যায়।
ত্রিমুখী সংঘাত
রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে যাওয়ার বিপরীতে বেড়ে যায় আমদানি ব্যয়। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে ১০৩ শতাংশ। ভোগ্যপণ্যসহ প্রাথমিক পণ্য আমদানি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ। একই সাথে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে ৪৯ শতাংশ। সবমিলেই ছয় মাসে সামগ্রিক আমদানি বেড়েছে সাড়ে ৫৪ শতাংশ। যে হারে আমদানি দায় বেড়েছে, সেই হারে রফতানি আয় বাড়েনি। অর্থবছরের সাত মাসে রফতানি আয় বেড়েছে ৩০ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের মূল্য ধরে রাখতে প্রায় দিনই ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে তার রিজার্ভ থেকে। গত বৃহস্পতিবারও দুই কোটি ৮০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে। সবমিলে চলতি অর্থবছরের আগস্ট থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে ৩২৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় ২৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, সামনে এ সঙ্কট আরো বেড়ে যাবে। কারণ, আগে থেকেই চাহিদা ও জোগানের মধ্যে বড় পার্থক্য ছিল, এরওপর চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জ্বালানি তেলের দাম আরো বেড়ে যেতে পারে। আর তখন আমদানি ব্যয় আরো বেড়ে যাবে। কিন্তু রেমিট্যান্স বাড়ছে না, বরং কমে যাচ্ছে। এতে ডলারের বাজারের চাপ আরো বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।